ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সিদ্ধান্তহীনতায় হুমকিতে দুই লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
সিদ্ধান্তহীনতায় হুমকিতে দুই লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন না পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে কুড়িল-পূর্বাচল ৩শ’ ফুট সংযোগ সড়কের দুই পাশের দেশি-বিদেশি দুই লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের উদ্যোগ।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন।

হতাশায় ভুগছেন দেশি বিনিয়োগকারীরাও।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ম্যানহাটানের আদলে কুড়িল-পূর্বাচল ৩শ’ ফুট সড়কের দুই পাশ সাজানো সম্ভব। এতে তৈরি হবে নতুন এক আধুনিক বাণিজ্যিক এলাকা। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকার ওপর চাপও কমবে। অথচ এ নিয়ে ভাবনা নেই রাজউকসহ সংশ্লিষ্টদের। নানামুখী অজুহাতে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন।

হায়াত রিজেন্সি হোটেল, রিলায়েন্স হাসপাতাল প্রকল্পও অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

বিদেশিদের মতো দেশি ৪০টি বড় গ্রুপ হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষা করছে।

জানা গেছে, এ সড়কের দুই পাশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে আগা খান ফাউন্ডেশন, ল্যাবএইড হাসপাতাল, অ্যাপোলো হসপিটালস, আদ-দ্বীন হাসপাতাল, আইএসডি স্কুল, শিকদার অ্যাপার্টমেন্ট, ইনডেক্স গ্রুপ, রাজভ্যালি সিটি, স্কটিশ ভিলেজ, এস আলম গ্রুপ, নূর শিপিং লাইনস, তানাস ফ্যাশন লিমিটেড, চৌধুরী হামিদ রিয়াল এস্টেট, গ্লোব ফার্ম লিমিটেড, লিভার ব্রাদার্স (প্রধান কার্যালয় বানানোর জন্য), ওয়ালটন (প্রধান কার্যালয় বানানোর জন্য), অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, রিলায়েন্স ফিন্যান্স কম্পানি, মেয়র আনিসুল হকের মোহাম্মদী গ্রুপ।

আরো রয়েছে বাংলাদেশ নেভির প্রকল্প, বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আবাসিক প্রকল্প, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডার সমিতির আবাসিক প্রকল্প, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের আবাসিক প্রকল্প। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিসহ বেসরকারি দুটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

সংযোগ সড়কের দুই পাশে রয়েছে স্বদেশ আবাসিক প্রকল্প, পিংক সিটি আবাসিক প্রকল্প, গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের গ্লোব কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প, বসুন্ধরা প্রকল্প, হায়াত রিজেন্সি পাঁচতারাবিশিষ্ট হোটেল, নাভানা গ্রুপের প্রকল্প, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র অফিস ও প্রেস, নিউজ চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোর এবং ক্যাপিটাল রেডিওর কার্যালয়।

বিশ্বের উন্নত শহরগুলোর মতো এখানেও ‘চায়না টাউন’ করার পরিকল্পনা নিয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষায় রয়েছেন চীনা বিনিয়োগকারীরা।

রাজউকের একটি সিদ্ধান্ত দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু রাজউকের সিদ্ধান্ত না পাল্টালে বিনিয়োগকারীরা এ দেশে বিনিয়োগ আর নাও করতে পারেন।

এক বিনিয়োগকারী বলেন, দেশকে সমৃদ্ধ করতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার কথা বলছে সরকার। অথচ বাস্তবে এ সড়কের দুই পাশে কেউ কোনো কিছু নির্মাণ করতে পারছে না। এ ব্যাপারে সরকারের পলিসি পরিষ্কার থাকা উচিৎ। কারণ জিডিপির গ্রোথ বাড়াতে হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হবে।

ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘রাজউক বরাবরই তার গতিতে চলে। এর কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আমি মনে করি, রাজউকের কাজ ডিজিটালাইজড করা দরকার। কিন্তু তা তারা করছে না। যদিও তাদের কাজে অনেক দায়িত্বশীলতার প্রয়োজন আছে। তাদের অনিয়মের জন্য শুধু তারা একাই দায়ী নয়, অন্যদেরও দোষ আছে। ’

রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘রাজউকের ধীরগতির অন্যতম কারণ হলো কোনো প্ল্যান পাসের আগে আরো ১০ প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি ওয়ান স্টপ সার্ভিসের। অথচ আজও রাজউক ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতে পারেনি। এটা হলে দ্রুত প্রকল্প পাস হবে। রাজউক চেয়ারম্যান পদে এক একজন আসেন, দু-এক বছর থাকেন, এরপর চলে যান। তাঁদের দিয়ে দ্রুত কোনো কাজ হয় না। কিন্তু রাজউকের ত্বরিত গতিতে কাজ করতে হবে। সরকারি স্টাইলে ধীরগতিতে কাজ করলে, বেসরকারি অন্য খাতের মতো আবাসন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতিসত্বর রাজউকের নতুন চেয়ারম্যানকে বেসরকারি খাতের দিকে নজর দিতে হবে। নইলে উন্নয়নের ধারা থেকে দেশ পিছিয়ে পড়বে। হুমকিতে পড়বে আবাসন খাত। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।