ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বর্জ্যে ভরেছে ভাগাড়! বিপাক কাটাতে গ্যাস-বিদ্যুৎ-সার উৎপাদন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৬
বর্জ্যে ভরেছে ভাগাড়! বিপাক কাটাতে গ্যাস-বিদ্যুৎ-সার উৎপাদন

ঢাকা: রাজধানীর বর্জ্য অপসারণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন(ডিএসসিসি)। এর সমাধানে উপচেপড়া বর্জ্য ব্যবহার করে বিদ্যুৎ-গ্যাস ও সার উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি।

সূত্র জানায়,  সম্প্রতি আটটি ইউনিয়ন যোগ হওয়ায় ঢাকার দুই সিটির আয়তন বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে বর্জ্যের উৎপাদনও। বর্তমানে দুই সিটিতে দৈনিক সাড়ে ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। কোরবানির ঈদে তা ৫ হাজার টন ছাড়িয়ে যায়।

নগরীতে মানুষের সচেতনতার অভাবসহ অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য হ্রাসের কোনো অবকাঠামো না থাকায় প্রতিদিন ১ হাজার ৮শ’ থেকে ২ হাজার ২শ’ টন বর্জ্য সরাসরি মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল্ডে(ভাগাড়) অপসারণ করা হচ্ছে। ১০০ একর জায়গার এ ভাগাড়ে বর্জ্যের স্তুপের উচ্চতা ৮৮ ফুট ছাড়িয়েছে। বর্জ্য ধারণ ক্ষমতা প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে আসায়  দ্রুত ল্যান্ডফিল্ড সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে বর্জ্যের পুনঃব্যবহার, বর্জ্য হ্রাস ও পুন:চক্রায়নের কোনো শিল্প গড়ে উঠেনি।

মাতুয়াইল ভাগাড়ে একটি ইনসিনারেশন প্ল্যান্টে ব্যবহৃত চিমনির উচ্চতা ভূমি থেকে ৩০ ফুট। এটি আশেপাশের এলাকার জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরুপ। হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোর রোগীরাও পড়েছেন বিপাকে।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, বর্জ্য অপসারণ নির্বিঘ্ন করা  ছাড়াও নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ সারও উৎপাদন করা হবে। এ লক্ষ্যে ৮১ একর ভূমি নতুনভাবে অধিগ্রহণ করা হবে। এর ৩১ একর ভূমি ব্যবহার করা হবে বর্জ্য থেকে গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য।

বর্জ্য থেকে গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ভূমি অধিগ্রহণে ৭৬৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা খরচ করতে চায় ডিএসসিসি।
 
ডিএসসিসি'র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক কমোডর এমকে বখতিয়ার বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাতুয়াইলের ল্যান্ডফিল্ডে বর্জ্য ধারণ ক্ষমতা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে বার বার ভূমি অধিগ্রহণ না করে স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আমরা বর্জ্য থেকে গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদন করার চিন্তা করছি। আমরা বর্জ্য থেকে সারও উৎপাদন করবো। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে কতো টাকা ইউনিটপ্রতি খরচ হলো, সেটি বড় কথা নয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো বর্জ্যের যথাযথ ব্যবহার করা। বর্জ্যের যথাযথ ব্যবহার করা গেলে নতুন ভূমি অধিগ্রহণের কথা চিন্তা করতে হবে না’।
 
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র (বিবিএস) জরিপে দেখা গেছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নগরীর সবচেয়ে দৃশ্যমান পরিবেশগত সমস্যা। বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠী নগরীতে বসবাস করেন যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১ সালে ৩৩ শতাংশে উন্নীত হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্জ্যের উৎপাদন সরাসরি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
 
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ভাগাড়ে জমে থাকা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনের লক্ষ্যে ইনসিনারেটর স্থাপন এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় মাতুয়াইল ভাগাড়ের অবকাঠামো উন্নয়ন করে পরিবেশবান্ধবভাবে বর্জ্য অপসারণ করা হবে। আর ভাগাড়ের ভরাট হওয়া অংশের বর্জ্য থেকে করা হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন।
 
পরিকল্পনার আওতায় কেনা হবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। উৎপাদিত গ্যাস-বিদ্যুৎ সঞ্চালনে ভাগাড়ের তলদেশে কৃত্রিম লাইনার স্থাপন করা হবে। এছাড়া লিচেট সংগ্রহ ও গ্যাস নির্গমন পাইপ স্থাপন, স্তূপীকৃত বর্জ্য সমতল করাসহ পোস্ট ক্লোজার সম্পন্নের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় হেভি ইক্যুইপমেন্ট ও যানবাহন সংগ্রহ করা হবে।

বর্জ্যের পুনঃব্যবহার, বর্জ্য হ্রাস ও পুন:চক্রায়নের মাধ্যমে ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ, সার ও গ্যাস উৎপাদনে যেতে চায় ডিএসসিসি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।