ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চামড়া কিনে বিপাকে রাজারহাটের ব্যবসায়ীরা

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬
চামড়া কিনে বিপাকে রাজারহাটের ব্যবসায়ীরা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যশোর: ব্যবসায়ীদের মূলধন সংকট আর সরকারি নির্ধারিত দাম গত বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক হওয়ায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর চামড়ার মোকাম রাজারহাটে দরপতন ঘটেছে।

কোরবানি ঈদের পর প্রথম হাটে খুলনা বিভাগসহ বরিশাল, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চামড়া এনে কেনা দামের চেয়েও অনেক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

অনেকে চামড়া ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেও পাচার রোধের কড়াকড়িতে তা পারেননি। তাই বাধ্য হয়ে তাদের কম দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। ফলে তৃণমূলের চামড়া ব্যবসায়ীদের অনেকে প্রথম দিনেই তাদের পুঁজি হারিয়েছেন।

রাজারহাট চামড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুল মালেক বাংলানিউজকে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর, খুলনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর এলাকার খুচরা ব্যবসায়ীরা এ হাটে চামড়া বিক্রি করেন। এসব খুচরা বিক্রেতাদের কেন্দ্র করে রাজারহাটে ৪০ থেকে ৫০টি স্থায়ী আড়ত গড়ে উঠেছে।

এছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, নাটোর, পাবনা ও ঈশ্বরদী থেকে অন্তত ২০ জন পাইকারি চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি প্রতিনিধিরা প্রতিহাটে রাজারহাটে আসেন। তবে ঈদের পর প্রথম হাটে পাইকারি ব্যবসায়ী ও ট্যানারি প্রতিনিধিরা সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনার কারণে খুচরা ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা মহাবিপাকে পড়েছেন।

গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর থেকে ৭৭ পিস গরুর চামড়া নিয়ে রাজারহাট হাটে আসেন স্বপন মোল্লা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া কিনে তা বিক্রির উপযোগী করা এবং যশোর পর্যন্ত আনতে সব মিলেয়ে খরচ হয়েছে ৯৫ হাজার ৪০০ টাকা। অনেক কষ্টে চামড়াগুলো বিক্রি করেছি ৮০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে আমার ১৫ হাজার ৪০০ টাকা লোকসান হয়েছে। ’

একই এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী মাসুদ শেখ বলেন, কেনার পর চামড়া থেকে মাংস ছাড়াতে শ্রমিককে দিতে হয়েছে ৫০ টাকা। প্রতিটি চামড়াতে পাঁচ কেজি লবণ ব্যবহার করতে হয়েছে। যার দাম ১৫০ টাকা। আর পরিবহন বাবদ খরচ হয়েছে আরো ৫০ টাকা। সব মিলিয়ে তার কেনাসহ হাটে আনা পর্যন্ত প্রতিটি চামড়ায় খরচ পড়েছে এক হাজার ৪০০ টাকা। কিন্তু সেই চামড়া বিক্রি হয়েছে গড়ে এক হাজার ১৫০ টাকায়।

তিনি আরও বলেন, ‘গত কোরবানি ঈদেও চামড়া বিক্রি করে আসল টাকা উঠাতে পারিনি। এবারও বড় ধরনের লোকসান হলো। এ ব্যবসা করা আর সম্ভব হবে না। ’

ফরিদপুর থেকে  ১০৮টি চামড়া নিয়ে রাজারহাটে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সরকারি নির্ধারিত দামেও চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। সাত মণ ওজনের একটি গরুর চামড়া মাত্র এক হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। অথচ ফুট হিসেবে তার দাম হওয়ার কথা দুই হাজার ৬০০ টাকা। এবার চামড়ার ব্যবসায়ে যে লোকসান হলো তা পুশিয়ে ওঠা আমার পক্ষে খুবই কঠিন। ’

তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর সরকারি নির্ধারিত চামড়ার দাম ছিল প্রতি ফুট ৭০ টাকা। এবার সেই চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা।

রাজারহাট চামড়া বাজারের ব্যবসায়ী মিলন দাস বাংলানিউজকে বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ঈদের আগে বকেয়া টাকার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পরিশোধ করেছে ট্যানারি মালিকরা। ফলে পুরো টাকা না পেয়ে ব্যবসায়ীদের পূঁজি সংকটের কারণেও চামড়ার দাম কম। ’  তিনি আরও বলেন, ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

রাজারহাট চামড়া বাজারের ইজারাদার শেখ হাসানুজ্জামান হাসু বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রথম হাটে এবার চামড়ার দাম তুলনামূলক কম হলেও তিন থেকে চার কোটি টাকার চামড়া বিক্রি হয়েছে। তবে পাচার রোধে প্রশাসনের কড়াকড়ির কারণে সীমান্ত এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা অবিক্রিত চামড়া ফিরিয়ে নিয়ে যেতেও পারছেন না। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬
ইউজি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।