ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেহাল দশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্রের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৬
বেহাল দশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্রের

ঢাকা: কর্মজীবী মা-বাবা অফিস সময়টাতে সন্তানকে নিরাপত্তার জন্য রাখেন অফিসের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে। সেই নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রের অবস্থা যদি বেহাল হয় তাহলে কাজে মনোযোগ থাকে কোন মা-বাবার? এমন প্রশ্ন বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার (মা-বাবা)।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেবা প্রদানকারী সংস্থার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বেহাল দশা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের। সন্তোষজনক সেবা না পাওয়ায় সারাক্ষণ সন্তানের চিন্তায় কাজে মনোযোগ দিতে পারছেন না কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কর্মরত মা-বাবারা।  

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের প্রথম সংলগ্নী ভবনের দ্বিতীয়তলায় কর্মকর্তাদের সন্তানদের অফিস চলাকালীন সেবা প্রদানের জন্য ২০০৬ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকে শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্র চালু হয়।

শুরু থেকেই ‘সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ’ নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এ শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্রটি পরিচালনা করছে।  

শিশুদেরকে যথাসময়ে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করা সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকালের নাস্তা পরিবেশন করার কথা থাকলেও চলতি বছরের

ফেব্রুয়ারিতে ‘শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্র‘ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তির শেষ হওয়ায় সেবার মান আশঙ্কাজনক ভাবে কমেছে।  

অভিযোগ রয়েছে, মা-বাবাকে ছাড়া থাকা এসব শিশুদের সঙ্গে অনেক সময় দুর্ব্যবহার করেন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানকারীরা (শিক্ষিকারা)। বাচ্চাদের তত্ত্বাবধানের মূল দায়িত্ব টিচারদের উপরে থাকলেও অধিকাংশ টিচার পরিচর্যাকারী আয়াদের উপর সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছেড়ে দেন। কিছু বললে রেগে যান।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্রের ইনচার্জ সেফরুন নেছা বলেন, যখন শুরু হয় তখন শিশু ছিল ২২ জন এখন ৯০ জন হলেও জনবল বাড়েনি। অনেক পরিশ্রম করে আমাদের কর্মীরা সেবা দিচ্ছেন।

অভিভাবকরা জানান, কিছু দিন আগে দিবা যত্ন কেন্দ্রের অনেক শিশু একসঙ্গে পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হয়। তখন অভিভাবকরা জানতে পারেন বাচ্চাদের নতুন খাবারের সাথে আগের দিনের বাসি খাবার মিশিয়ে রান্না করে খাওয়ানো হয়েছিল। আবার অনেক সময় দেওয়া হয় ঠাণ্ডা খাবারও। অনেক শিশুই এসব খাবার খেতে চায় না। ৪ থেকে ৮ বছর বয়সী স্কুল থেকে আসা বাচ্চাদের গোসল, কাপড় বদলানো, খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ঠিক মত যত্ন নেয়া হয় না। একই টয়লেট বাচ্চারা ছাড়াও শিক্ষক, আয়ারাও ব্যবহার করেন যা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। কেন্দ্রের ভিতরের ময়লাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না।  

উল্লেখিত বিষয়গুলো উল্লেখ করে প্রায় এক বছর আগে তৎকালীন গভর্নরকে লিখিতভাবে জানান অভিভাবকরা। এতে শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্রটির মানের অবনমন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উক্ত কেন্দ্রের ইনচার্জসহ অন্যান্য স্টাফদের অভিভাবক ও শিশুদের সাথে আপত্তিকর ও অপেশাদারি আচরণ, বিভিন্ন সমস্যা কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত করা হয়।

কিন্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা ও অসহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকগণ একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের কল্যাণ শাখার সংশ্লিষ্ট উপ-মহাব্যবস্থাপক, মতিঝিল অফিসের মহাব্যবস্থাপক ও নির্বাহী পরিচালক মহোদয়ের সাথে এবং এ বিষয়ে একটি সুষ্ঠু ও সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করার অনুরোধ নিয়ে এইচআরডি’র দায়িত্ব প্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। উল্টো খাবার ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা বাবদ ‘সেবা’র জন্য অভিভাবক ও ব্যাংককে আগের চেয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে।

বাংলাদেশের সরকারি বা স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্র চালু করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পথিকৃত। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বর্তমানে অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকও এখন শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছে। এমনকী, সরকারি অফিসগুলোতেও ডে কেয়ার স্থাপনের ব্যাপারে সরকার উদ্যোগী হচ্ছে। অথচ, এ বিষয়ে পথিকৃত বাংলাদেশ ব্যাংকই তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলানিউজকে বলেন, অলাভজনক সংস্থায় পরিচালিত হওয়ায় সেবায় ঘাটতি থাকার কথা নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ঘণ্টা, অক্টোবর: ৪, ২০১৬
এসই/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।