ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে ঠিকাদার নিয়োগে কারসাজি!

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে ঠিকাদার নিয়োগে কারসাজি!

ঢাকা: একটি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে এ জালিয়াতি করা হয়েছে।

অফিস চলাকালে কর্মকর্তাদের সন্তানদের সেবা দিতে ২০০৬ সালের ১ আগস্ট শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্রটি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রটি প্রধান কার্যালয়ের প্রথম সংলগ্নি ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত।

দিবাযত্ন কেন্দ্রে শিশুদের পড়ালেখা, খাবার খাওয়ানো, গোসল করানো ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সেবা দেওয়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুরু থেকেই ‘সেবা নারী ও শিশুকল্যাণ’ নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্রটি পরিচালনা করে আসছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের (সেবা নারী ও শিশুকল্যাণ) মেয়াদ শেষ হয়েছে। তার আগেই ঠিকাদার নিয়োগ করতে গত বছরের ১০ অক্টোবর ও ২৪ নভেম্বর দরপত্র আহবান করা হয়। এতে যেসব প্রতিষ্ঠান শিডিউল কিনে দরপত্র জমা দিয়েছিল, তাদের কাজ না দিতে তা বাতিল করা হয়।

সর্বশেষ গত ১১ আগস্ট একটি দৈনিক পত্রিকায় ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহবান করা হলেও তাতে একটি শর্ত গোপন করা হয়েছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত দরপত্রের শর্তে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি সরকারি-বেসরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে গত ৫ বছরের মধ্যে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ১৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা থাকতে হবে। দরপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত তিন বছরে ৩০ লাখ টাকা লেনদেন করতে হবে।

কিন্তু শিডিউলের দরপত্রে এসব শর্তের বাইরে আরও একটি শর্ত যোগ করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে, শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্রে ৩ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শিডিউল কিনলেও সেখানে থাকা আরও একটি শর্ত দেখে হতবাক হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘একই কাজের দুই ধরনের শর্ত দেওয়ায় টাকা খরচ করে শিডিউল কিনে কাজ পাওয়া যাবে না’।

‘কারণ, দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান খুব বেশি নেই। হাতে গোনা দু’একটি প্রতিষ্ঠিত হলেও সেখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা কারোরই তিন বছর হবে না। এটি পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার নাটক মাত্র’।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘সেবা নারী ও শিশুকল্যাণ’ প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ ব্যাংকের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানকারী সেফরুন নেছাকে কাজ পাইয়ে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের কল্যাণ শাখার যুগ্ম পরিচালক সাইফুল জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের সেবা প্রদানের বিধান থাকলেও সাইফুল ইসলাম ওই নারীকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্থায়ী চাকরি দেওয়ারও পাঁয়তারা করছেন।

এজন্যই তিনবার দরপত্র আহবান করেও ঠিকাদার নিয়োগ চূড়ান্ত কর‍া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাইফুল ইসলাম কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তাকে বেশ কয়েকবার এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি মতিঝিল অফিসের নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানাতে তিনদিন সময় নেন। তিনদিন পর যোগাযোগ করা হলে শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘বিষয়টি আমি মতিঝিল অফিসের নির্বাহী পরিচালকের কাছে জানতে চেয়েছি। তিনি না জানালে কিছু বলছে পারছি না’।

**বেহাল দশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্রের

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
এএসআর

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।