ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হুমকির মুখে পেপার কাপ শিল্প

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৬
হুমকির মুখে পেপার কাপ শিল্প

ঢাকা: বিদেশ থেকে কাপ আমদানি, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ও ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ বান্ধব-স্বাস্থ্যসম্মত ডিসপোজেবল পেপার কাপ শিল্প।
 
প্রায় এক দশক আগে বাংলাদেশে পণ্যটির উৎপাদন শুরু হলেও নানা রকম সংকটের কারণে এখনো পুরোপুরি প্রসারিত হতে পারেনি।

যাত্রা শুরুর পর বন্ধও হয়ে গেছে কয়েকটি কারখানা।
 
পেপার কাপ হচ্ছে এক ধরণের পেপার দিয়ে তৈরি। শতভাগ পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্য সম্মত কাপ তৈরির কাগজে পলিথাইলিননের প্রলেপ দেওয়া আছে। যার মাধ্যমে সে নিজেও পচে অন্যকে পচাতে সাহায্য করে। পরে জৈব সারে পরিণত হয়। এটি বিশ্বব্যপী জনপ্রিয় একটি পণ্য।
 
জানা গেছে, এ পর্যন্ত পেপার কাপ উৎপাদনকারী দেশ এনভায়রনমেন্টাল পেপার প্রোডাক্টস ও বাংলাদেশ পেপারসহ মোট ৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানা বন্ধ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, বিদেশ থেকে ভারতীয় নিম্নমানের কাপ আমদানি, কাপ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে অধিক শুল্ক আরোপ করা।
 
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে একটি পেপার কাপ তৈরির মোট খরচে বিদেশ থেকে এক‌ই আকারের প্রায় দুটি কাপ আমদানি করা যায়। যে কারণে বিদেশি কাপগুলো কম দামে পেয়ে দেশি কাপ নিতে চাননা ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
 
বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে পেপার কাপ তৈরির কাঁচামাল আমদানি করতে শুল্ক অনেক কম। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা এমনকি প্রতিবেশি দেশ ভারতও পেপার কাপের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। নেপালে সাড়ে সাত শতাংশ, মিয়ানমারে ৫ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। সেখানে বাংলাদেশে দিতে হয় ৬১ শতাংশ।
 
এতো টাকা শুল্ক দিয়ে কাচাঁমাল আমদানি করা সম্ভাবনাময় এই শিল্পের জন্য এখন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও উদ্যোক্তাদের উৎসাহী করতে পণ্যটির জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে এবার বর্ষ সেরা জাতীয় উদ্যোক্তা পুরস্কার প্রদান কর‍া হয়েছে।
 
পেপার কাপ ও প্লেট শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব। এগুলো উৎপাদনে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। এই কাগজে পলিথাইলিননের প্রলেপ দেওয়া আচে। । মাটির সংস্পর্শে এলে ২১ দিনের মাথায় এগুলো জৈব সারে পরিণত হয়।
 
বিশ্বব্যপী জনপ্রিয় পণ্যটি ভারতে ব্যপক জনপ্রিয়। সেখানে পেপার কাপ না হলে মাটির কাপ ব্যবহার হচ্ছে। প্লাস্টিকের কাপ একদম নিষিদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এটির ব্যপারে সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
 
এছাড়াও এশিল্পের প্রসারে গ্রীন ব্যাংকিংয়ের আওতায় কোনো ব্যাংক ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পের জন্য সরকারি জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হলেও পেপার কাপ শিল্পের জন্য কোনো জায়গায় বরাদ্দ নেই।
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে পণ্যটি নতুন মনে হলেও বিশ্বে অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। প্রতিবেশি দেশ ভারতেও বহুল প্রচলিত। আমাদের সচেতনতার অভাবে পণ্যটি জনপ্রিয় হচ্ছে না। প্লাস্টিকের কারণে নদীনালা খালবিল ড্রেনেজ ব্যবস্থা আজ বিলুপ্তির পথে।
 
পেপার কাপ উৎপাদনের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে এবছর বর্ষসেরা জাতীয় উদ্যোক্তা পুরস্কার পেয়েছেন কেপিসি পেপার ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক কাজী সাজেদুর রহমান।
 
তিনি বলেন, যখনই বাংলাদেশে পেপার কাপ জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। তখনই ভারতীয় পেপার কাপ আমদানি শুরু হয়েছে। দেশটিতে পেপার কাপের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক না থাকায় অনেক কম দামে বিক্রি করছে।
 
তিনি আরও বলেন, দেশের সম্ভাবনাময় এই খাতের উদ্যোক্তাদের উৎসাহী করতে বর্ষসেরা পুরস্কার দেওয়া হলেও কাঁচামাল আমদানির জন্য ডিউটি ফ্রি সুবিধা না দেওয়া হয়। তাহলে এই শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। মুখ থুবড়ে পড়বে।
 
বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এনডিসি বলেন, পেপার দিয়ে পণ্য উৎপাদনকারীরা কখনো আমাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে আসেনি। দেশের সব শিল্পের স্বার্থেই সরকার কাঁচামাল আমদানিতে সহায়তা করে এবং ফিনিশড প্রোডাক্টে উচ্চ কর আরোপ করে। বিষয়টি এতোদিন আমাদের জানা ছিল না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬
এসই/বিএস
 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।