জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ট্যারিফ কমিশনকে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাদের প্রস্তাবে প্রতি লিটারে ৫ টাকা করে দাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কারওয়ানবাজারে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের পরিবেশক আমির এন্ড ব্রাদার্সের মালিক আমির হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে রূপচাঁদা তেলের দাম প্রতি লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ১০৩ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে কেন দাম বাড়িয়েছে কোম্পানি সেটা তারা জানেন না। কোম্পানি থেকে বলা হয়েছে লিটারে ৫ টাকা করে বাড়িয়ে বিক্রি করতে হবে। তারা সেইভাবেই বিক্রি করছেন।
অন্যদিকে কারওয়ান বাজারের রাজ্জাক ট্রেডার্সের মালিক রাজ্জাক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সিটি গ্রুপের তীর তেল সবচেয়ে বেশি চলে হোটেলে। আর রূপচাঁদা চলে পরিবারে। লিটারে ৫ টাকা দাম বাড়ার কথা বললে ক্রেতাদের সঙ্গে ঝগড়ার সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে কিইবা করার আছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে তাই লিটারে ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে এক প্রকার নির্বিকার হয়েই আমাদের ব্যবসা করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে তেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে চালের দামও। চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে গুলশানের ফেনী রাইস ভান্ডারের মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, মোটা চাল গত সপ্তাহে বিক্রি করেছেন ৩৭ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। মিনিকেট বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকায়। আঠাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে ছিলো ৪২ টাকা। শুধু তাই নয়, সব ধরনের চালের দামই প্রতি কেজিতে ১-২টাকা করে বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে চালের সরবরাহ কম। আর কিছু আমদানিকারক চাল গুদামে আটকে রেখেছেন ফলে বাজারে চালের দাম বস্তা প্রতি ১০০-২০০টাকা বেড়েছে। ফলে চালের দাম বেড়েছে।
তেলের দাম বাড়ার বিষয়ে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। এই কারণে আমাদের তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। কেননা তেল হচ্ছে একটি আমদানি নির্ভর পণ্য। তাই যে দামে ক্রয় করতে হবে ঠিক সে দামে আমাদের বিক্রিও করতে হবে। এছাড়া এই বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যে সেটার অনুমোদনও দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যখন তখন দ্রব্য-সামগ্রীর দাম বাড়লে ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে যায়। তবে কি কারণে তেল বা চালের দাম বাড়ছে সেটা সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে। কেননা তেল হচ্ছে আমদানি নির্ভর একটি পণ্য। এটির দাম যদি আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে থাকে তাহলে দাম বাড়তে পারে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে যদি তেলের দাম স্থিতিশীল থাকে তাহলে দাম বাড়াটা দুঃখজনক। চালের দাম বৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে রয়েছে। তাই যেকোনো কিছু অনুমোদন দেওয়ার আগে সরকারকে সঠিক পর্যবেক্ষণ করে সেটার অনুমোদন দিতে হবে। অন্যথায় ভোগান্তির মাত্রা শুধু বাড়তেই থাকবে।
সার্বিক বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, চালের দাম কেন কেজি প্রতি ১-২ টাকা বাড়ছে সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। দাম বাড়ার পেছনে কোনো কারণ আছে কিনা সেটাও অনুসন্ধান করা হবে। অন্যদিকে তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠনের একটি চিঠিতে প্রতি লিটারে ৫ টাকা করে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা বিষয়টিকে পর্যবেক্ষণের জন্য ট্যারিফ কমিশনকে বলেছি। তারা আমাদের বিষয়টি জানালে, তারপর বিবেচনা করা হবে তেলের দাম বৃদ্ধির অনুমোদন দেয়া হবে কি না। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে এটা সত্য। ফলে তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি অযৌক্তিক নয়। তারপরও আমরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘন্টা, জানুয়ারি ২১,২০১৭
এসজে/আরআই