ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভ্যাটের হার ৭ শতাংশ করার দাবি ডিসিসিআই'র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭
ভ্যাটের হার ৭ শতাংশ করার দাবি ডিসিসিআই'র ভ্যাটের হার ৭ শতাংশ করার দাবি ডিসিসিআই'র-ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: বহুল আলোচিত নতুন মূসক (মূল্য সংযোজন কর) আইন আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। নতুন আইনে এ হার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান।

সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় রাজস্ব ভবনে এনবিআরের চেয়ারম্যানের নজিবুর রহমানের সঙ্গে ঢাকা সংগঠনটির নব-নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের  সৌজন্য সাক্ষাতে এ দাবি জানান  তারা।

এসময় ডিসিসিআই’র পরিচালনা পর্ষদের নেতারা এবং এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


 
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যবসায়ীরা চায় নতুন ভ্যাট আইন আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হোক। কিন্তু ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ শতাংশ করা হোক।  
 
ভ্যাট দেওয়ার সময় ব্যবসায়ীদের হয়রানির প্রসঙ্গও তুলে ধরে ডিসিসআই সভাপতি বলেন, এখনো ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। ভ্যাট দেওয়ার পদ্ধতি উন্নত ও সহজ পদ্ধতি চালু করুন। আমরা এক টাকা ভ্যাট দিতে গিয়ে তিন টাকার হয়রানি হতে চাই না। সরকার ২০১২ সালে নতুন ভ্যাট আইন সংসদে পাস হয়। তিন বছর পর ২০১৫ সাল থেকে আইনটি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের বিরোধীতার মুখে তা করা যায় নি। নতুন আইনে সব ধরনের পণ্য ও সেবার উপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।  
 
তিনি বলেন, বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিক্রি ধরে এর উপর এককালীন নির্দিষ্ট পরিমাণ (প্যাকেজ পদ্ধতি) ভ্যাট দিয়ে আসছিলেন তুলনামূলক ছোট ব্যবসায়ীরা। নতুন আইনে সে ব্যবস্থা থাকছে না। সঙ্কুচিত ভিত্তিমূল্য ধরে ভ্যাট দেয়ার ব্যবস্থাও থাকছে না। ফলে বর্তমানে বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন পরিসেবার ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে এক লাফে ১৫ শতাংশ হবে। রডসহ নির্মাণসামগ্রীর ভ্যাটের হারও বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। এভাবে বেশকিছু পণ্যের ভ্যাট এক লাফে অনেক বেড়ে যাবে। ফলে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।  
 
আলোচনায় অংশ নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে ব্যবসায়ীদের হয়রানি থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন।  

হয়রানি রোধে চলতি সপ্তাহে এনবিআর ই-মেইল সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক এই ৩ বিভাগের ফিডব্যাক ইমেইল সার্ভিস চালু করা হবে। যে ই-মেইলে যোগাযোগ করে যেখানে করদাতারা তাদের সমস্যা জানানোর পাশাপাশি সমাধানও হতে পারবেন।  
 
তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট  আইন বাস্তবায়ন হতে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি আছে। নতুন ভ্যাট আইন মানুষের হয়রানি বন্ধের পাশাপাশি সবার জন্য মঙ্গল নিয়ে আসবে। হয়রানি বন্ধে আমরা রাজস্ব সংলাপ করে যাচ্ছি। অন্যদিকে যারা হয়রানি করছে সেই সব কর্মকরর্তাদের শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে।
 
এ সময় ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবনের সামনের বাগানে ফুলের পাশাপাশি বাঘের ভাস্কর্যও রয়েছে।  
 
ডিসিসিআই নেতারা বলেন, আমাদের দেশে সব ব্যবসায়ী এনবিআরকে সরকারি কর দিতে চায়। তবে এনবিআরের কাছ থেকে আমরা অনেক হয়রানির স্বীকার হচ্ছি। তাদের উপর আমাদের আস্থার সংকট রয়েছে এবং এনবিআরও আমাদের উপর আস্থা সংকটে ভুগছে। তারা আমাদের বিশ্বাস করতে চায় না, আর আমরাও তাদের বিশ্বাস করতে চাই না। তবে আশা করছি ক্রমান্বয়ে এ ফারাগ কেটে যাবে।
 
সংগঠটির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সব সময় ব্যবসায়ীদের পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে। ডিসিসিআই ট্যাক্স কার্ডের পরামর্শ সর্বপ্রথম দিয়েছিল। আজ সেই বিষয়ে এনবিআর সারাদেশে কাজ করছে। নতুন করে ভ্যাট স্মার্ট কার্ডের চালুর প্রস্তাব করেছে। আশাকরি এ প্রস্তাবটিও রাজস্ব বোর্ড বাস্তবায়ন করতে পারবে।
 
এসময় নতুন অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নতুন অর্থবছর ২০১৭-১৮ চলে এসেছে। এর বাজেট পরিকল্পনা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কাযক্রম শুরু করে দিয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি তৈরি করা হবে।
 
এ সময় ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, পরিকল্পনা অনুয়ায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ভিশন ২০২১ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০তম অর্থনীতিক দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বর্তমান ২২ শতাংশ থেকে যথাক্রমে ২৯ শতাংশ এবং ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করত হবে। এ লক্ষ্যে বিনিয়োগ বান্ধব করনীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করে টেকসই ও সাম্যভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হবে। এছাড়া সরকারের রজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্যাক্স জিডিপির মাত্রা বাড়াতে হবে এবং বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে।  
 
ডিসিসিআই করের আওতা বাড়ানোর সম্পর্কে বলেছে, রাজস্ব সংস্কৃতি তৈরি করতে, বর্তমান করনীতি ও কর আদায়ের পরিবেশকে আরও সহজতর এবং বন্ধুসুলভ করতে হবে। বাংলাদেশের ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বর্তমানে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ, যেখানে ভিয়েতনামে তা ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালে ১৯ দশমিক ৫, থাইল্যান্ডে ১৬, ফিলিপাইনে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ওইসিডি দেশগুলোতে এর পরিমাণ ৩৪ শাতংশ। বাজেট বর্ধিত ব্যয় ও বার্ষিক উন্নয় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে আগামী দুই বছরের মধ্যে ট্যাক্স-জিডিপির পরিমাণ ১৫ শতাংশ বাড়াতে হবে।  

এছাড়া টার্নওভার ট্যাক্স লিমিট বর্তমান ৮০ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করে ডিসিসিআই।  

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭
ওএফ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।