এই ব্যাংকে নিয়োগ লাভের আশায় অনেকেই বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও যোগদান করেননি। অগ্রণী ব্যাংকের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাছাইয়ের পর অনেকেই আগের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধায় কোটায় নিয়োগের পরে পিতার সনদ যাচাই করতে ২০১৬ সালের ১৬ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, ৩৪তম বিসিএস’এ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ প্রাপ্তদের পিতার মুক্তিযোদ্ধা সনদ পরবর্তী সময়ে মিথ্যা বা জাল প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে নিয়োগ বাতিল করে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ওই প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সিনিয়র অফিসার পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেন। অথচ তা উপেক্ষা করে নিয়োগের আগেই সনদ যাচাইয়ের নিজেদের সিদ্ধান্তেই অনড় অগ্রণী ব্যাংক। ফলে এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের নাগরিকদের ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিসিএস ক্যাডারদের মতোই প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করে অগ্রণী ব্যাংকেও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেছি। এখন কি অবস্থায় আছে জানি না। খোঁজ নিয়ে বলতে পারবো। ’
মুক্তিযোদ্ধার কোটায় ২০১৫ সালে ‘সিনিয়র অফিসার’ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় অগ্রণী ব্যাংক। সব প্রক্রিয়া শেষে নিয়োগের জন্য ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট ৬শ ৫৫ জনকে চূড়ান্তভাবে বাছাই করে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি।
এসব প্রার্থীর পুলিশি তদন্ত (পুলিশ ভেরিফিকেশন) অনেক আগেই শেষ হলেও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত এখনো শুরুই হয়নি। এভাবেই অগ্রণী ব্যাংকে প্রার্থীদের নিয়োগ ঝুলে আছে। এর ফলে চাকুরি প্রার্থীরা পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
প্রসঙ্গত, অগ্রণী ব্যাংকের এই নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল একটি পক্ষ। ২০১৬ সালে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা (যার নম্বর ১৩৮৮৯/১৬)। কারণ হিসেবে তারা বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু নাতি-নাতনিকে নির্বাচন করা হয়েছে।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাকরি পরীক্ষায় অকৃতকার্য মুক্তিযোদ্ধা-সন্তানরা তৃতীয় কোনো পক্ষের প্ররোচনায় আদালতে রিট করে চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিলম্ব করার চেষ্টা করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির একজন সদস্য বাংলানিউজকে জানান, সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলা কোটা নীতিমালা, নিয়োগ কোটা নীতিমালা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সব নিয়ম মেনেই তারা নিয়োগ দিয়ে থাকেন। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার পান মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা। যেহেতু প্রতিটি নিয়োগ জেলা কোটা (নম্বর সমবিধি-১) এস-০৯-২০০৯-৪৪২ অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে, সেহেতু জেলা কোটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করা হয়েছে।
চলতি ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রিট আবেদনটি ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট স্থিতাবস্থা প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু তারপরও নিয়োগ পাচ্ছেন না ওই ৬শ ৫৫ জন চাকরিপ্রার্থী। তাদের নিয়োগপত্র আটকে আছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের তদন্তের অপেক্ষায়। অগ্রণী ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত শেষ করেই চূড়ান্ত নিয়োগ দেবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস উল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘ বিসিএস ক্যাডারদের বেলায় কী হয়ে থাকে সেটা আমরা দেখব না। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় যা-ই বলুক, আমরা আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেকই চলব। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
এসই/জেএম