বুধবার ( ৫ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে জাতীয় বাজেট প্রণয়ণের লক্ষ্যে ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের ( ইআরএফ) সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, রাজস্ব আহরণে এনবিআর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
ইআরএফ’র সাবেক সভাপতি বাদল বলেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আশানুরূপ কর আদায় হচ্ছে না। এর কারণ কি সেটা বের করতে হবে। যারা বিদেশে সেকেন্ড হোম করছে তারা দেশে সঠিকভাবে কর দিচ্ছে কিনা কিংবা দেশের টাকা সঠিকপন্থায় বিদেশে নিয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। ঝিমিয়ে পড়া শিল্পাঞ্চলগুলোকে আবার জাগিয়ে তোলা যায় কি না সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে কতো মানুষ কর দেওয়ার যোগ্য তার কোনো তথ্য এনবিআর’র কাছে আছে কিনা, না থাকলে কেন নেই তার উৎস বের করা। এছাড়া ব্যাংকে অর্থ জমা রাখলে ইটিআইএন থাকলে ১০ শতাংশ আর না থাকলে ১৫ শতাংশের যে নিয়ম এটা কমাতে হবে।
ইআরএফ’র সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, বিদেশে মুদ্রা পাচার বেড়ে গেছে। মুদ্রা পাচার রোধে এনবিআর, দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিভাবে অর্থ পাচার রোধ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য প্রদান করা হচ্ছে কিনা সেটার বিহিত করতে হবে। কেননা ব্যাংক ঋণ নেওয়ার সময় যে অর্থ দেখানো হয় আর কর দেওয়ার সময় তার অনেকাংশে কম দেখানো হচ্ছে। সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যের উপর ভ্যাট বাড়াতে হবে। বিশেষ করে যেগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সেগুলোতে ভ্যাট বেশি আরোপিত করা উচিত।
ইআরএফ সদস্য ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বলেন, রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে উন্নয়নের জন্য টেকসই উন্নয়নের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। যেহেতু প্রতিবছরই রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে তাই কার্বণ ট্যাক্স আহরণ করা যায় কিনা সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে? এছাড়া ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে আমজনতার সম্পৃক্ততা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষ যেন উৎসবমুখর পরিবেশে ভ্যাট দিয়ে আনন্দ পায় সেটার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুতের উপর ভ্যাট আরোপ করলে সমস্যা আরও বাড়বে কিনা সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। কোনোভাবেই হুট করে কোনো বিষয়ের উপর ভ্যাট আরোপ করা যাবে না। যতোটা কম ভ্যাট আরোপ করে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো যায় সেটার দিকে নজর রাখতে হবে।
ইআরএফ সদস্য শাহনেওয়াজ বলেন, দেশের প্রত্যেক মানুষ আয়কর দিতে চায়। এখন আর আয়কর মানুষের কাছে ভীতিকর নয়। এটা এনবিআর প্রমাণ করেছে। চীনে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে কিছুটা সময় লাগলেও পরবর্তীতে তারা সফলতা পেয়েছে। আমাদেরও সেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কেননা ডিজিটাল পদ্ধতিতে একটা বিষয়ের সফলতা পাওয়া বড়ই কষ্টকর। এছাড়া আয়কর ফরম সহজ করতে হবে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ একটি সার্বজনীন বিষয়। এটা থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা যায় কিনা সেটাও এনবিআরকে ভাবতে হবে। আমদানি করা পণ্যের উপর সঠিক শুল্ক আরোপিত হয়েছে কিনা সেটাও তদন্ত করে দেখতে হবে।
সবশেষে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সবকিছুকে ডিজিটাল করা হচ্ছে। কেউ যেন আর ভ্যাট ফাঁকি দিতে না পারে তার জন্য তরুণ প্রজন্ম কাজ করছে। আমরা কর বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছি। ব্যবসায়ীরা যেন বেশি বেশি কর দিয়ে সরকারের উন্নয়নকে আরও বেশি ত্বরাণ্বিত করেন তার চেষ্টা চলছে। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ তবে আমরা চেষ্টা করছি অবশ্যই সফলতা অর্জন করব।
আলোচনাসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- এনবিআর’র মূসক নীতির সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন,করনীতির সদস্য পারভেজ ইকবাল,শুল্কনীতির সদস্য মো.লুৎফর রহমান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৭
এসজে/জেডএম