সারি সারি পাকা, আধাপাকা দালান ঘর, আর অনেক কাচাঘর তুলে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট। তবে সে মার্কেটের মালিক কিন্তু রাজউক নয়।
অথচ পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে পূর্বাচল ১ নম্বর সেক্টরের ওই জমিতে হওয়ার কথা ছিলো দেশের বৃহত্তম স্টেডিয়াম তৈরির কথা।
জমিটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অধীনে। কিন্তু তাতে পজেশন বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ফেরদৌসি আলম নিলা।
তবে বিষয়টি রাজউকের নজরে নেই তা নয়। রাজউক চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী বলেছেন, শিগগিরই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সংশ্লিষ্টদের জমিটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানি। একটি প্রভাবশালী মহল পূর্বাচলে আমাদের জমিতে মার্কেট নির্মাণ করেছে। তবে তা দখলমুক্ত করা হবে। ’
‘এটি মূলত স্টেডিয়ামের জায়গা। রাজউক এরই মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে জমিটি বরাদ্দ দিয়েছে। তারাই এটি পাবে,’ বলেন বজলুল করিম।
তবে রাজউকের সূত্রগুলো বলছে খুব সহজেই যে এ জমি দখলমুক্ত করা যাবে তেমনটা নয়। এরই মধ্যে রাজউকের পক্ষ থেকে একাধিকবার উচ্ছেদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ না পাওয়ায় তা করা সম্ভব হয়নি।
সরকারদলীয় এক নেত্রী প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় একের পর এক স্থাপনা তৈরি হচ্ছে, আর এভাবে চলতে থাকলে জমি বেহাত হয়ে যাওয়ারই আশঙ্কা করছেন রাজউকের কর্মকর্তারা।
রাজধানীর অদূরে এই পূর্বাচল উপশহরের ভোলানাথপুর এলাকায় ৩০০ ফুট সড়কের পাশেই রাজউকের এই প্লট। যার বর্তমান বাজার দর প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
সেখানে গড়ে ওঠা নিলা মার্কেট এরই মধ্যে বেশ জমে উঠেছে। শাকসবজি, মিষ্টি, মাছ আর ফলমূলে পসরা সাজিয়েছেন অনেকে। খাবারের হোটেল রয়েছে বেশ কয়েকটি। মার্কেটে কাঁচা আর আধাপাকা শতাধিক দোকানঘর রয়েছে।
স্থানীয়রাই এসব দোকানের পজেশন কিনে নিয়েছেন। আর প্রতিদিন দোকান থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় হচ্ছে। যার প্রায় সবটাই যাচ্ছে ফেরদৌসি নিলার হাতে।
স্থানীয়রা পজেশন কিনে দোকান তুলে ভাড়া দিচ্ছেন বলেও জানান দোকানিরা।
ভাড়ার বাইরেও প্রত্যেককে নানা পদে অর্থ দিতে মার্কেট পরিষ্কার করার জন্য আলাদা খাত রয়েছে।
দোকানিরা কিংবা পজেশন ক্রেতারা জানেন, ‘এ জমি ফেরদৌসি আলম নিলার নামে বরাদ্দ করা হয়েছে। আর সে কারণেই তিনি এর পজেশন বিক্রি করতে পারছেন।
মার্কেটের কোনও কোনও দোকানের পজেশন পাঁচ লাখ টাকায়ও বেচাকেনা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত নিলা তার স্বামী শাহ আলম ফটিক নিয়মিত মার্কেটে আসেন বলেও জানান কয়েকজন।
মার্কেটে তাদের একটি অফিসও রয়েছে। তবে বুধবার (১৯ এপ্রিল) সে অফিসে কাউকে পাওয়া গেলো না।
এদিকে আরেকটি তথ্য জানা গেলো মার্কেটের দোকানিদের কাছ থেকেই। তারা জানালেন, নিলা মার্কেট ঘিরে ভোলানাথপুরসহ আশপাশের এলাকায় মাদকের আস্তানা গড়ে উঠেছে। আশপাশে বসে জুয়ার আসরও।
সে আসর থেকেও প্রতিরাতে লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয় বলে জানান তারা। যার ভাগও যায় ফেরদৌসি আলম নিলার হাতে।
নাম প্রকাশ না করে একজন এও দাবি করেছেন, স্রেফ নিলা মার্কেট থেকে ফেরদৌসি আলম নিলার মাসে দশ লাখ টাকা আয় হয়।
এ বিষয়ে কথা বলেছেন ফেরদৌসি আলম নিলা। তার দাবি বাজারটি তার নামে নয়। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা নিজেরা ধীরে ধীরে সেখানে বাজারটি জমিয়েছেন।
তবে জমিটি রাজউকের কাছ থেকে বরাদ্দ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে স্বীকার করেছেন ফেরদৌসি আলম নিলা।
বাংলাদেশ সময় ০৯০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭