বাংলাদেশি টাকা ও রাশিয়ান রুবলের মধ্যে সরাসরি বিনিময় হার নির্ধারণ এবং দুই দেশের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সুবিধা সৃষ্টির বিষয়ে আলোচনার লক্ষ্যে ঢাকা থেকে একটি প্রতিনিধি দল শিগগির মস্কো যাচ্ছে।
প্রতিনিধি দলটি দুই দেশের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেন পরিশোধ সংক্রান্ত বিদ্যমান সরাসরি ব্যাংকিং লেনদেন জটিলতা নিরসনের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সম্পদ নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় (ওএফএসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বিবেচনায় নিয়ে রাশিয়ান বৃহৎ ব্যাংকগুলোর সঙ্গে করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায়সমূহ খুঁজে বের করবে।
ঋণপত্রের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা এবং বাংলাদেশি টাকা ও রাশিয়ান রুবলের মধ্যে সরাসরি বিনিময় হার নির্ধারণের অন্য কোনো উপায় আছে কিনা তা বিশ্লেষণ করার বিষয়েও আলোচনা করবে প্রতিনিধি দলটি।
ঢাকার প্রতিনিধি দল রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, প্রথম সারির বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের প্রতিনিধি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং দেশটির বাণিজ্যিক সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্পর্ক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সঙ্গে। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি কোনো বাণিজ্য না থাকায় ব্যাংকিং সম্পর্কও নেই। রাশিয়ায় কোনো বাণিজ্য হলে তা হয় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। এ অবস্থায় রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইছে বাংলাদেশ।
২০১৬ সালের ১৫-১৬ জুলাই মঙ্গোলিয়ায় আসেম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে বাংলাদেশ-রাশিয়ার মধ্যে ব্যাংকিং সুবিধা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। তার আলোকে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশি টাকা ও রশিয়ান রুবলের মধ্যে সরাসরি ‘বিনিময় হার’ নির্ধারণে যেসব প্রতিবন্ধকতা তা নিয়ে আলোচনা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, রাশিয়ার মুদ্রা রুবল আর্ন্তজাতিক লেনদেনে সহজে বিনিময়যোগ্য নয়। দুই দেশের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য না হওয়ায় এবং রাশিয়ার ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাংকসগুলোর কোনো নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট না থাকায় টাকা ও রুবলের মধ্যে বিনিময় প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হয়নি। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে এবং রাশিয়ার ব্যাংকসমূহের সঙ্গে নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট স্থাপন করা গেলে মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করা হতো।
বাংলাদেশে ২০০৩ সালের ৩১ মে থেকে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণে ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট পদ্ধতি শুরু হয়। এতে বিনিময় নির্ধারণ হয় বাজারের যোগান ও চাহিদার ভিত্তিতে। টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করে সরকার। ফ্লোটিং একচেঞ্জ রেট ব্যবস্থায় কেবল মার্কিন ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়। আর মার্কিন ডলারের সঙ্গে কনভারসেসনের মাধ্যমে ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানিজ ইয়েন, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সুইডশ ক্রোনা, সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার, চাইনিজ ইউয়ান ও ইন্ডিয়ান রুপির সঙ্গে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়।
রাশিয়ার প্রথম সারির ব্যাংকগুলোর ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সম্পদ নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের (ওএফএসি) নিষেধাজ্ঞার কারণে করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং সর্ম্পক স্থাপন করা যাচ্ছে না। তা করতে গেলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর বর্তমানে চালু করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং হিসাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গোলিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সফরে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপনে একটি সমঝোতা হয়েছিল। তার আলোকে কার্যক্রম চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৭
এসই/এইচএ/