শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের নির্ভরশীল একটি সূত্র বাংলানিউজকে বিষয়টি জানিয়েছে। সূত্রটি বলছে, গত বছর প্রথম দফায় আবেদন দেওয়া হলেও মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) তা দ্রুত বাস্তবায়নে এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর আরেকটি পত্র পাঠানো হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, শুল্ক গোয়েন্দা, শুল্ক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রেশনিং ও ঝুঁকিভাতা চেয়ে প্রথমে ২০১৬ সালের ১২ জুলাই এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন করা হয়। আবেদনটি এনবিআরের তরফ থেকে বাংলাদেশ সচিবালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-৩ এ প্রস্তাব আকারে পাঠানো হলে এরপর চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি সেটা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুবিধাপ্রাপ্তির যৌক্তিকতাসহ সুনির্দিষ্টভাবে পাঠানোর জন্য বলা হয়।
অর্থাৎ প্রস্তাবনাটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনাধীন আছে। এটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্যই মঙ্গলবার ( ২৫ এপ্রিল) এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর আরও একটি পত্র পাঠায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, সাম্প্রতিককালে শুল্ক গোয়েন্দাসহ শুল্ক দপ্তরসমূহ শুল্ক ফাঁকি প্রতিরোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এর ফলে অবৈধভাবে আমদানিকৃত মাদক, স্বর্ণ, মুদ্রা, ইলেকট্রনিক্স, সিগারেটসহ অন্যান্য পণ্যাদি ব্যাপকভাবে জব্দ হয়েছে।
এছাড়া ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১১শ কেজি স্বর্ণ ও ১৩১ জন ব্যক্তিকে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। অপরদিকে অন্যান্য পণ্যসহ এই দপ্তর একইসঙ্গে প্রায় ৩৫২ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য আটক করেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিনিয়ত শুল্ক গোয়েন্দার অন্যান্য অফিসগুলোতে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। সেসব কাজেও এরইমধ্যে সফলতা অর্জন করেছে শুল্ক গোয়েন্দা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বেনাপোল, ধানুয়া-কামালপুর এলসি স্টেশন, বকশিগঞ্জ, জামালপুর এবং মংলায় শুল্ক কর্মকর্তাদের ওপর হামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। হুমকি’র সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব পালনকালে কর্মকর্তারা শারীরিকভাবে লাঞ্চিতও হয়েছেন। কিন্তু শঙ্কার কথা হচ্ছে, ঝুঁকি নিয়ে এসব কার্যক্রম চালালেও শুল্ক গোয়েন্দাদের নিজস্ব কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফলে অভিযান পরিচালনা করা ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ অন্যান্য বাহিনীগুলোর ঝুঁকি বিবেচনায় তাদের রেশনিং ও ঝুঁকিভাতা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলানিউজকে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দিনদিন এই ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা রেশনিং ও ঝুঁকিভাতা পেলেও শুল্ক গোয়েন্দায় কর্মরতরা পান না। ফলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের রেশনিং ও ঝুঁকিভাতার বিষয়টির যৌক্তিকতা রয়েছে।
দায়িত্বরত কর্মকর্তারা এই সুবিধাটি পেলে তাদের কাজের গতি বাড়বে বলে মনে করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ করছে। আইনেও রয়েছে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ করবে তাদের সুবিধা বাড়ানোর। বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে, আশা করছি শিগগির সুরাহা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ঘণ্টা,এপ্রিল ২৫,২০১৭
এসজে/এইচএ/