রোববার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সভা হয়েছে। এতে অর্থমন্ত্রীকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি না মেনে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হলে ছাত্রদের মতো রাজপথে আন্দোলনে নামবেন তারা।
অর্থমন্ত্রী পাল্টা হুঁশিয়ারি, হুমকি দিয়ে বলেছেন, আন্দোলন করে কিছুই হবে না। আন্দোলন দমন করা হবে। ব্যবসায়ীদের ভাব এমন যেন তারা যুদ্ধ লাগাতে চান!
জবাবে ব্যবসায়ীরা বলেন, আপনি মন্ত্রী হয়ে এভাবে হুমকি দিতে পারেন না। আমরা এই আইন মানবো না। কোনো আলোচনা নয়, আমরা আন্দোলনেই সমাধান চাই। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলা হয়, আপনারা দুই-তিন বছরের জন্য এসে ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। আপনাদের বক্তব্যে হুমকি-ধমকি থাকে।
জবাবে এমবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানও উত্তর দিয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, ক্ষমতা নয়, আমরা দায়িত্ব পালন করি মাত্র।
সভার শেষ দিকে নতুন ভ্যাট আইনের পক্ষে এনবিআর চার পৃষ্ঠার একটি প্রচারপত্র দেয় উপস্থিত ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের। সেখানে হিসাব করে দেখানো হয়েছে, নতুন আইনে ভ্যাট তো বাড়বেই না, উল্টো ক্রেতার ওপর ভ্যাটের চাপ কমবে আর ব্যবসায়ীরা যেহেতু রেয়াত পাবেন, তাতে তারাও লাভবান হবেন। কিন্তু ওই প্রচারপত্রে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে উল্লেখ করে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ এনবিআর যে হিসাব দেখিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, এখন একটি পণ্যের যে মূল্য রয়েছে, তার মধ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার পরও পণ্যটির একই মূল্য থাকবে। কিন্তু এটি বাস্তবসম্মত নয়। কারণ ১৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে পণ্যমূল্য নির্ধারণের সময় অবশ্যই এখনকার চেয়ে মূল্য বাড়িয়ে ধরবেন ব্যবসায়ীরা।
এভাবে তুমুল বাগিবতণ্ডা, যুক্তিতর্ক ও হট্টগোলের মধ্য দিয়ে নতুন ভ্যাট আইন সংশোধনে ব্যবসায়ীদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির ওপর ভ্যাট আরোপ করেছিল সরকার। পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন অর্থমন্ত্রী। ওই আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক, ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ প্লাস্টিক প্যাকেজিং, রোল ম্যানুফ্যাকচারার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা আবু মোতালেব ভ্যাট আইন সম্পর্কে বলেন, আমরা এখন পরামর্শ করছি। একটু পরে চলে যাবো। কিন্তু বাজেট যখন ঘোষণা করা হবে, তখন হতাশ হবো। গতবার আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হয়নি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, নতুন ভ্যাট আইনের বিষয়ে এনবিআর ও এফবিসিসিআই কিছু কাজ করলেও তার ফলাফল শূন্য। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। কিছু লোক দেখানো প্রশিক্ষণ হয়েছে। প্রশিক্ষণ না দিলে চকবাজারের ব্যবসায়ীরা কীভাবে জানবেন- ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার কী? মূলত ভারত-চীন থেকে হু হু করে পণ্য দেশে ঢুকছে। বন্ড সুবিধার পণ্যও বাজারে আসছে। এ অবস্থায় সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রাখা হচ্ছে, প্যাকেজ ভ্যাট থাকছে না। ভ্যাট আইন নিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য আইএমএফ অর্থ দিয়েছে। দেশে ৩৭৭টি অ্যাসোসিয়েশন ও ৬৭টি চেম্বার রয়েছে। এনবিআর তাদের একজনকেও প্রশিক্ষণ দেয়নি। লোক দেখানোর জন্য এফবিসিসিআই থেকে সাত-আটজনকে ডেকে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আমাদের ট্রেনিং না দিয়ে কীভাবে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে? এখনো সময় আছে, ভ্যাট আইন সংশোধন করুন।
তিনি বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে এফবিসিসিআই যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা মেনে নিতে হবে। তা না হলে ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।
পাঁচ কোটি টাকার কম টার্নওভারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট আইনের আওতায় আনা হলেও আন্দোলনের হুমকি দেন তিনি।
এ সময় অর্থমন্ত্রী তাকে থামিয়ে দেন। বলেন, আট লাখ নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভ্যাট দেয় মাত্র ৩২ হাজার। আপনারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কতজন ভ্যাট দেন? আবার আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন? এভাবে হুমকি দেবেন না। যদি আপনারা আন্দোলন করেন, তবে আমরা তা দমন করবো।
অর্থমন্ত্রীর এমন কড়া বক্তব্যের পর উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতারা উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। ব্যবসায়ীদের শান্ত করে এফবিসিসিআইর প্রথম সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আপনারা ধৈর্য ধরুন। আশা করি, সরকার ব্যবসায়ীদের ন্যায্য দাবি মেনে নেবে। আমরা এখনও বাজেট দেখিনি। বাজেটে কী আছে জানি না।
এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, এ ধরনের পরামর্শক কমিটির সভায় আন্দোলনের হুমকি দেওয়া ঠিক নয়।
যথাযথ ভাষা প্রয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
পরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আবু মোতালেবের বক্তব্য আমার পছন্দ হয়নি। তিনি হুমকি দিয়েছেন। যুদ্ধ লাগিয়ে দেবেন; এমন একটা ভাব! এটা ঠিক নয়। আমরা এখানে আলোচনা করতে বসেছি। তাহলে এ ধরনের কথা কেন? ভবিষ্যতে এটা খেয়াল রাখবেন। যেন এ ধরনের কথা না হয়।
এরপর ‘আই এম সরি টু সে’ বলে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।
অর্থমন্ত্রী-ব্যবসায়ী নেতার পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তাপ
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
আইএ