অপরদিকে এনবিআর’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশায়িত প্রতিষ্ঠান কোনো লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন, পারমিট প্রদান বা নবায়নকালে সুবিধা গ্রহনকারী ব্যক্তির নিকট থেকে প্রাপ্ত অর্থের উপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক উৎসে কর্তনপূর্বক সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করতে হবে। ’
শুধু তাই নয়, ২০১০ সালে এস.আর.ও জারির পর সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি পাসপোর্ট অফিসগুলোকেও উৎসে ভ্যাট কর্তনের বিষয়টি এনবিআর’র পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অধীন বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলো ৩০ জুন ২০১০ থেকে ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত পাসপোর্ট ইস্যু, নবায়ন বাবদ প্রাপ্ত অর্থের উপর প্রযোজ্য উৎসে মূসক সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। ফলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কাছে ওই সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পায় ৩৭৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫৯ হাজার ৫৫৩ টাকা। এর সঙ্গে প্রতিমাসে ২ শতাংশ হারে আরো সুদযুক্ত হয়েছে ২০৯ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৬ টাকা। সবমিলিয়ে সুদসহ ২০১৬ সালের নভেম্বর অবধি বকেয়ার পরিমাণ ৫৮৫ কোটি ৭৬ লাখ ১০ হাজার ৯৭৯ টাকা। এছাড়া ওই বকেয়ার সঙ্গে আরও ৫ মাসের সুদ যুক্ত হয়ে বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়াবে ৬শ’ কোটি টাকার বেশি।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসক নীতি) ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন, পারমিট প্রদান বা নবায়নের মাধ্যমে গ্রাহককে সেবা প্রদান বা পাসপোর্ট প্রদান সরকারের পক্ষ থেকে একটি সেবা। ভ্যাট আইনের দ্বিতীয় তফসিল অনুযায়ী, কোনো ধরনের নোটিফিকেশনের মাধ্যমে পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়নি, বিধায় তা মূসকযোগ্য। সুতরাং এখানে পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে তাদের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।
বকেয়া বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিঃ জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান, বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ২০১০ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন, পারমিট প্রদান বা নবায়নকালে উৎসে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কর্তনের বিধান আছে। কিন্তু এনবিআর থেকে পাঠানো ওই এস.আর.ও টি ২০১০ সালের। আর পাসপোর্ট ফি’র বিপরীতে উৎসে মূসক কর্তনের বিষয়টি পাসপোর্ট অধিদপ্তর জেনেছে ২০১৪ সালে। তাই বিষয়টি যথাসময়ে তারা অবগত না হওয়ার কারণে গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা হয়নি। সুতরাং যে অর্থ গ্রাহকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়নি সেই বকেয়া পরিশোধ সম্ভব নয়। এমনকি বকেয়া পরিশোধে অর্থ বিভাগ থেকে বরাদ্দ পাওয়াও দূরহ ব্যাপার। এজন্য সমুদয় বকেয়া অর্থ মওকুফ করা হোক।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কাছে দীর্ঘদিন ধরে বড় একটি অংশ বকেয়া পড়ে আছে। এজন্য সরকারের উন্নয়ন কাজে সমস্যা হচ্ছে। কেননা কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে বকেয়া পড়ে থাকলে সেটা উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া ভ্যাট আদায় করতে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। সুতরাং পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে তাদের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। কোনোভাবেই বকেয়া মওকুফের কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৭
এসজে/জেডএম