আর এই ভ্যাট ফাঁকি নিয়ে এনবিআর-এর বৃহৎ করদাতা ইউনিট মোবাইল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের জুন মাসে ৪টি মামলা দায়ের করে। যে মামলায় সম্প্রতি অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল রায়ও এনবিআরের পক্ষে গেছে।
এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময়ে ৩শ বর্গফুটের উপরে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত স্থান ও স্থাপনা ভাড়াবাবদ মূসক (ভ্যাট) প্রদান করেনি মোবাইল কোম্পানিগুলো। ফলে উক্ত সময়ে এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেড ১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার ৩০৮ টাকা ১০ পয়সা, গ্রামীণ ফোন লিমিটেড ১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন লিমিটেড ৩৪ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ২৫৬ টাকা ৬৫ পয়সা এবং রবি আজিয়াটা লিমিটেড ১৩ কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৩৭ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
আর এই ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ায় এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট ২০১৬ সালের জুন মাসে গ্রামীণ ফোন, রবি আজিয়াটা, এয়ারটেল ও বাংলালিংকের নামে ১টি করে ভ্যাট ফাঁকির মামলা দায়ের করে। পরে মামলা আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়ায়। চলতি মাসে দেওয়া অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের রায়ও এনবিআরের পক্ষে গেছে।
এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটে মোবাইল কোম্পানিগুলো এখন তাঁদের ফাঁকি দেওয়া অর্থ জমা দিতে বাধ্য। কিন্তু মোবাইল কোম্পানিগুলোর দাবি, এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট ( এলটিইউ) ভ্যাট ফাঁকির যে অভিযোগটি তুলে মামলা করেছে, সেই অভিযোগটিই সঠিক নয়। কেননা স্থান ও স্থাপনা বাবদ ভ্যাট স্থান ও স্থাপনা মালিকদেরই পরিশোধ করার কথা, কোনো মোবাইল কোম্পানির নয়।
অপরদিকে এনবিআর বলছে, ৩শ বর্গফুটের উপরে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত স্থান ও স্থাপনার ভাড়াবাবদ ভ্যাট কোম্পানিকেই দিতে হবে। আর এই সেই ভ্যাট মালিকপক্ষকে ভাড়া প্রদানের সময় কেটে রেখে দেবে কোম্পানি।
গ্রামীণ ফোনের কমিউনিকেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ হাসান বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ভ্যাট বাবদ যে দাবিনামা তথা মামলা করা হয়েছে তা যৌক্তিক নয়। এই মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়েছে কিনা সেটাও জানা নেই। অপরদিকে আমরা স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার সমুদয় অর্থ স্থান ও স্থাপনার মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছি। সেখানে আমরা কেন এই অর্থ পরিশোধ করব? তবে আমাদের বিরুদ্ধে যে ভ্যাট ফাঁকির মামলা হয়েছে একথা সত্য।
ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার আশিকুর রহমান ভ্যাট ফাঁকির মামলার কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়টি যিনি দেখভাল করেন তিনি দেশে নেই।
তিনি নিজেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, আপনি বাসা ভাড়া দেন, তাই বলে কি নিজে ভ্যাটও পরিশোধ করবেন? এটা যৌক্তিক নয়। আর ভ্যাট দেবেন স্থাপনার মালিক, ভাড়াটে বা কোম্পানি নয়।
বাংলালিংকের কর্পোরেট কমিউনিকেশন ম্যানেজার অংকিত সুরেকা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আমাদের অনেক মামলা আছে। সব মামলা তো আর মনে রাখা সম্ভব নয়। তবে স্থান ও স্থাপনা ভাড়াবাবদ ভ্যাট ফাঁকির কোনো মামলা আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। ফলে এই মুহূর্তে আমার পক্ষে কিছুই বলা সম্ভব নয়।
বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার মো. মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে সব কোম্পানিই স্থান ও স্থাপনার উপর ভ্যাট দেয়। কিন্তু মোবাইল কোম্পানিগুলো ভ্যাট দিতে নারাজ। মোবাইল কোম্পানিগুলো আমাদের কোনো কথাই না শুনে মামলাটি তারা হাইকোর্ট, আপিল বিভাগ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে। সেখানে গিয়েও তারা হেরে গেছে। এরপরও তারা ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের সমুদয় অর্থ পরিশোধের ব্যাপারে গড়িমসি করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
এসজে/জেএম