শুক্রবার (১১ আগস্ট) সকালে এখানেই কথা হলো তার সঙ্গে। বেসরকারি চাকরিজীবী ইমদাদুল হকের সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার।
জানালেন, কাঁচাবাজারেও যেন সব কিছুর দামই লাগামহীন পাগলা ঘোড়া। মাছের দাম গত সপ্তাহের থেকে কেজি প্রতি মাছ ভেদে ৫০ থেকে একশ টাকা বেশি। চালের দামের ঊর্ধ্বগতির পাগলা ঘোড়া একটা পর্যায়ে থমকে থাকায়, চাল নিয়ে আতঙ্ক কিছুটা কম থাকলেও, জানালেন মিনিকেট এখনও ৫৫ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। কোনো সবজির দামই ৬০ টাকার নিচে কেজি নয়। মরিচের দামেও ঊর্ধ্বগতি। কেজিতে মরিচ কিনতে লাগছে ১২০ টাকা। আর খুচরা একশগ্রাম কিংবা দুইশ গ্রাম কিনতে কেজিতে পড়ছে ১৬০ টাকা পর্যন্ত।
ইমদাদুল হক বলেন, বাজার অনেক চড়া। বিশেষ করে সবজির দাম গত সপ্তাহের থেকে কেজিপ্রতি ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
বাজারের সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য তিনি দায়ী করলেন সিন্ডিকেটকে। তার মতে সিন্ডিকেটই এসব জিনিসের দাম বাড়িয়ে রাখছে।
বাজারে কোনো জিনিসেরই অভাব নেই। তারপরও দাম কেন কমছে না। প্রশ্ন ইমদাদুল হকের।
শহীদুর রহমান প্রতি সপ্তাহেই আসেন এই বাজারে। জানালেন সবজির দাম অনেক বেশি। রসুনের দাম কিছুটা কমলেও পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতিতে তিনি আতঙ্কিত। বললেন, বাজারে জিনিসের দাম আর মধ্যবিত্তের নাগালে নেই। সবকিছুর দামই বাড়তি। তারপরও খেতে তো হবে।
চাষের পাবদা আর বড় বেলে মাছ কিনছেন নুরুল ইসলাম। এখানে প্রতি সপ্তাহেই বাজার করেন, তিনিও চাকরিজীবী। জানালেন পাবদা ও বেলে মাছ পছন্দ করেন তিনি। তবে গত সপ্তাহের থেকে এই সপ্তাহে দাম একটু চড়া। তিনি মাঝারি সাইজের চাষের পাবদা কিনলেন সাড়ে সাতশ টাকা কেজি, বেলেও পড়লো সাতশ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহের থেকে কেজিতে ৫০ টাকা বেশি।
উত্তরা আজমপুর কাঁচাবাজার রাজধানীর মোটামুটি অভিজাত কাঁচাবাজারগুলোর একটি। বৃহত্তর উত্তরার ঠিক মাঝখানে ঢাকা-ময়মনসিংহ মূল সড়কের পাশেই অবস্থান হওয়ার কারণে বেশ জমজমাট বাজারটি। মূলত মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তরাই এই বাজারের মূল ক্রেতা।
শাকসবজি, মাছ-মাংসের আমদানিও এই বাজারে অনেক বেশি। বিশেষ করে মাছের বাজারে বড় বড় মাছের বেশ সমাহার চোখে পড়লো। ১৮ কেজির কাতলা, ১৪ কেজির বাঘাইর, কিংবা ৮ কেজির চিতল মাছ পর্যন্ত রয়েছে। এই সাইজের মাছ রাজধানীর গুটিকয়েক বাজার ছাড়া সাধারণত চোখে পড়ে না। বেশ প্রমাণ সাইজের চিংড়ি মাছেরও সরবরাহ প্রচুর। উঠেছে প্রচুর ইলিশ মাছও। এছাড়া অন্যান্য মাছ তো আছেই।
কিন্তু সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত বাজারে অবস্থান করেও বাজারে খুব একটা ভিড় চোখে পড়লো না। বড় বড় রুই, কাতলা নিয়ে বসে আছেন মাছ বিক্রেতা ইবরাহীম। জানালেন, আজকে শুক্রবার হিসেবে লোক কম। এই মাছ বিক্রি হওয়া নিয়ে তাই শঙ্কিত তিনি। ক্রেতা না থাকলেও দাম বেশি কেন, জানত চাইলে বলেন, ‘কি করুম কন, পাইকাররা তো আর কম দামে ছাড়ে না। তাই বেশি দাম দিয়া হলেও কিন্যা আনতে হয়। মাছ নিয়া তো বসা লাগবো। ’
সবজি বিক্রেতা রবিউলও জানালেন, ক্রেতা সমাগম কম। সবজির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে জানালেন পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কম। এজন্য তিনি দায়ী করলেন বর্ষাকে। রবিউল বলেন, ‘টানা বর্ষার পর রোদ ওঠার পর অনেক ক্ষেতেই সবজি পইচা গেছে। তার উপর নতুন কইরা আবার বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে পাইকারি বাজারে সবজি কম উঠছে। গত সপ্তাহের থেকে এই সপ্তাহে সব সবজির দামই কেজিতে ১০ টাকা বেশি।
সবজি বিক্রেতা রুবেলকে জিজ্ঞেস করলাম, ক্রেতাদের অভিযোগ আপনারা নাকি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে রুবেলের দাবি, দাম বেশি পাইকারি বাজারেই। পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে তারা অসহায়।
সব মিলিয়ে উত্তরা বাজার ঘুরে বোঝা গেল জিনিসপত্রের দাম বেশি। যে কারণে সংসারের বাজেটের হিসাব মেলাতে গিয়ে টানাপড়েনে পড়েছেন মধ্যবিত্তরাও।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
ওএইচ/আরআই
** পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের পাল্লা আড়াইশ