২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কৃষি বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০ হাজার ৯শ ৯৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৭ হাজার ৪শ ৮৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা বা ৩৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ বিতরণ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে।
আর নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ২২ টি ব্যাংক কৃষি ঋণের ৭০ শতাংশই এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক কৃষি ঋণের ৩০ শতাংশ এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করার কথা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ লঙ্ঘন করা ব্যাংকগুলো হলো- প্রিমিয়ার ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকসহ মোট ২২টি ব্যাংক।
এনজিওর মাধ্যমে এসব ঋণ বিতরণে সুদ আদায় করা হয়েছে ২৪ থেকে ২৭ শতাংশ। অথচ ব্যাংকগুলো সরাসরি এ ঋণ বিতরণ করলে মাত্র ৯ শতাংশ সুদে এ ঋণ পেতো কৃষক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদায়ের ঝামেলা না থাকায় এবং পরিচালন ব্যয় কমাতে ব্যাংকগুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে এনজিওর মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করছে। গত কয়েক বছর ধরেই এনজিওর মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তা নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪৮৯ কোটি ৫২লাখ টাকা বিতরণ হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিলো ৫৩৭১ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিলো ৪৮২৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৩৫১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এনজিওর মাধ্যমে ঋণ নিতে কৃষককে ব্যাংক ঋণের সুদের চেয়ে অনেক বেশি দিতে হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে মাত্র ৯শতাংশ সুদে টাকা নিয়ে এনজিওগুলো ২৪ থেকে ২৭ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করছে। এভাবে ঋণ বিতরণ করায় কৃষকদের কাছে কম সুদের ঋণ দেওয়ার মূল ধারণা গুরুতরভাবে ব্যহত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে ব্যাংকগুলো তাদের শাখাগুলোর মাধ্যমে বছরে কৃষি ঋণের অন্তত ৩০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দের জন্য সুপারিশ করে যাতে কম সুদের হারে ঋণ পাওয়া যায়। ব্যাংকগুলো আদায়ের ঝামেলা এড়াতে কৃষককে ঋণ দিতে নানাভাবে এনজিও মুখী করে তোলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর এসএম মনিরুজ্জামান ২০১৭-১৮ অর্থবছরের কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ অনুষ্ঠানে বলেন, এনজিওগুলোর ঋণ বিতরণ ও আদায় করতে ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ পরিচালন ব্যয় করতে হয়। যে কারণে তারা উচ্চ সুদ আদায় করে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, এভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক এনজিওরে মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণে আরও উৎসাহি করে চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণের ঊর্ধ্বগামী প্রবণতা ইঙ্গিত দেয় যে তারা (ব্যাংকগুলো) এনজিও এবং এমএফআই এর মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণে বেশি আগ্রহী।
বেসরকারি ব্যাংক সাধারণত এনজিওর মাধ্যমে তাদের ঋণের বড় অংশ বিতরণ করছে, কারণ তারা গ্রামীণ এলাকায় তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করতে ইচ্ছুক নয়। বেসরকারি ব্যাংক এনজিওগুলির মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করলে তত্ত্বাবধানে খামারের ঋণের জন্য সুপারভাইজরি ও আদায়ের খরচ কমাতে পারে। পাশাপাশি কৃষি ঋণ বিতরণে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে তাদের মোট ঋণের ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, কোনো ব্যাংক নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেই পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
এসই/ওএইচ/