বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ওয়েব সাইটগুলোর দেয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ‘এ’ গ্রেডের প্রতি বর্গফুট ফিনিশড ও ক্রাস্ট লেদার বিক্রি হচ্ছে ২ ডলার থেকে ৩ ডলার বা ১৬০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। বাজার ভেদে তা ৫ থেকে ৮ ডলার বা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।
বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করে প্রতি বর্গফুট চামড়া ফিনিশড বা ক্রাস্ট পর্যায়ে আনতে সব মিলিয়ে খরচ হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা। অথচ এসব চামড়া বিদেশে রফতানি হচ্ছে উৎপাদন খরচের কয়েকগুণ বেশি দরে।
একাধিক ট্যানারি মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর বিশ্ব বাজারে ক্রাস্ট লেদারের মন্দা ভাব থাকলেও বর্তমানে চামড়ার দর ও চাহিদা উর্ধ্বমুখি। একইসঙ্গে হাজারীবাগের ট্যানারি পল্লী নিয়ে দেশে বিদেশে নেতিবাচক ধারণা থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার ব্যবসায়ীরা পরিবেশগত দিক থেকে বাংলাদেশের চামড়া নিতে কম আগ্রহী ছিলো। কিন্তু সাভারের ট্যানারি পল্লীতে চামড়া শিল্প হস্তান্তরের ফলে বাংলাদেশি চামড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ওইসব দেশের ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে প্রতিবছরই বাড়ছে দেশে চামড়া উৎপাদন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি-১ শাখার সরবরাহকৃত ‘কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ’ শীর্ষক কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ‘আর্ন্তজাতিক বাজার মূল্য তথা ভারতের কাঁচা চামড়ার বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে কোরবানির ঈদে সংগৃহিত কাঁচা চামড়ার উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ সমীচীন হবে। ’ এতে আরো বলা হয়, ‘এ বছর আর্ন্তজাতিক বাজার বিশেষ করে ভারত, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে কাঁচা চামড়ার মূল্য কিছুটা বেশি। ’
চামড়ার এবারের দাম সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, দেশের চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে বিশ্ববাজারে চামড়ার মূল্য বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গরুর চামড়ার মূল্য ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। খাসির চামড়ার মূল্য সারা দেশে প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়ার মূল্য সারা দেশে প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার এ বছর চামড়াকে ‘প্রোডাক্ট অফ দ্যা ইয়ার’ ঘোষণা করেছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে সরকার ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
এদিকে আর্ন্তজাতিক বাজারের চেয়ে দেশের বাজারে কাঁচা চামড়ার দাম কয়েক গুণ কম নির্ধারণ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াতউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এখন ব্যবসা করাই কষ্ট।
তিনি বলেন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরে আদালতের হঠাৎ সিদ্ধান্তে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। সাভারের চামড়া শিল্প পল্লীর জমির দাম শুরুতে ১৯৫ টাকা প্রতি বর্গফুট নির্ধারণ হলেও এখন সিইটিপির খরচ যোগ করে ১৭ শ’ ৬০ টাকা নির্ধারণ করে জটিলতা তৈরি করা হয়েছে। এতে জমির মালিকানা বুঝে না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারছেন না।
তবে প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার এন্ড লেদার গুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিনও। ঘুরিয়ে পেচিঁয়ে তিনিও বলেন, চামড়া শিল্প নগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরের আগে সরকারের সঙ্গে করা সমঝোতা চুক্তিতে বলা ছিলো, হেমায়েতপুরের সিইটিপির টাকা সরকার বহন করবে। এখন তা মালিকদের ওপর চাপানো হচ্ছে।
এদিকে পোস্তার ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাভারে নতুন করে বিনিয়োগের টাকা জনগণের পকেট থেকে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন ট্যানারি মালিকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৭
আরএম/জেডএম