চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজার খারাপ, লেবার খরচ ও প্রক্রিয়াজাত খরচ গত বছরের চেয়ে এবার বেশি হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এছাড়া পরিবহন খরচ তো আছেই।
এদিকে হাটে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনতে না আসায় স্থানীয় মহাজনরা কম দামে চামড়া কিনে মজুদ করছেন। এতে করে চামড়ার সঠিক দাম পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। সে সঙ্গে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হচ্ছে এ শিল্পের ব্যবসায়ীদের।
বড়দরগা থেকে আসা ব্যবসায়ী রিপন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর বিভিন্ন ফড়িয়া ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকার চামড়া কিনে হাটে এনেছি। কিন্তু সকাল থেকেই প্রায় ক্রেতাশূন্য হাট। কিছুকিছু মহাজন চামড়া দাম করছেন তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। এতে করে লাভ তো দূরের কথা পুঁজিও হারাতে হবে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ৮শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা দরে চামড়া কিনতে হয়েছে। এরপর প্রক্রিয়াজাতকরণ ও লেবার খরচ হয়েছে প্রতি চামড়ায় দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা। তাছাড়া হাটে চামড়া আনতে পরিবহন খরচও কম না। কিন্তু সব খরচ মিলে চামড়া প্রতি ১৫শ’ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু হাটে ক্রেতা কম থাকায় চামড়া দাম করছেন মাত্র ১২শ’ টাকা। এতে করে ব্যাপক লোকসান গুণতে হবে।
পলাশবাড়ী চামড়ার আড়তদার সুমন মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, ১০ লাখ টাকার চামড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনে মজুদ করেছি। কিন্তু হাটে ক্রেতা কম থাকায় দাম করছে মাত্র সাত লাখ। এতে করে পুঁজি হারাতে হবে। সে সঙ্গে এ ব্যবসা থেকে আগামীতে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা গত বছরের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেনি। সে কারণে তারা হাটে আসেননি। এখন স্থানীয় মহাজন ও বড় ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে স্থানীয় মহাজনদের কাছে কম দামে চামড়া বিক্রি করলেও তা নগদে বিক্রি করতে পারায় খুশি অনেক ব্যবসায়ী।
এদিকে উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ এ হাটে ২০ কোটি টাকা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু একদিকে চামড়ার বাজার মূল্য খারাপ অন্যদিকে লবনের দাম বৃদ্ধি। তাছাড়া ঢাকার ট্যানারি মালিকরা হাটে চামড়া কিনতে না আসায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক পূরণেও বাধা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর কোরবানির ঈদের দিন থেকে 6শ’ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার দরে পশুর চামড়া কিনেছেন ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। এরপর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ, লেবার খরচ ও পরিবহন খরচ দিয়ে হাটে আনা পর্যন্ত চামড়া প্রতি ২শ’ থেকে আড়াইশ টাকা খরচ হয়েছে। এরপরেও বাজারে ক্রেতা কম ও গত বছরের বকেয়া পরিশোধের ভয়ে হাটে ট্যানারি মালিকরা প্রবেশ না করায় চামড়ার সঠিক দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
পলাশবাড়ী উপজেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলতাফ হোসেন মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর পলাশবাড়ী হাটে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। তবে চামড়ার দাম ও আমদানি কম থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বাংলানিউজকে জানান, হাটে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৭
আরবি/