পাইকারি বাজারে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি হলেও খুচরা বাজারে চালের দাম অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। আগামীতে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা।
শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বাবুবাজার চালের আড়তের ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে মার্চ-এপ্রিল মাসে যে মোটা চাল ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই চাল পরের মাসে মঙ্গলবার (৯ মে) বেড়ে হয়েছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। বর্তমানে সেই চালের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা। পাঁচ মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১৪ টাকা। যা মণ প্রতি বেড়েছে ৫৬০ টাকা।
তখন দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছিলেন যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা হওয়ায় চাল আসছে না। তাই চালের দাম বেড়েছে। অপরদিকে, পাইকারি চাল বিক্রেতারা মিল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলছিলেন যে, মিল মালিকরা চালের দাম বাড়াতে চাল গুদাম জাত করে রেখেছে। তারা চাউল বাজারে ছাড়ছেন না। দীর্ঘ ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো একই অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। দেশে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও কমেনি চালের দাম বরং বেড়েছে।
রাজধানীর পাইকারি বাজারে চালের মান ভেদে মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫২ থেকে ৫৩ টাকায়, রত্না চাল ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, আটাশ চাল ৪৯ থেকে ৫০ টাকা তা আগের সপ্তাহে ৪৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে স্বর্ণা চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। স্বর্ণা গুটি ৪২-৪৫ টাকা, হাসকি নাজিরশাইল ৬০ টাকা, গুড়া নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৬৬ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারে যে হাসকি চাল ৪২-৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, ৪ থেকে ৫ মাসের ব্যবধানে এখন তা ৬০ টাকা এবং ৪৮-৫৩ টাকা দরের নাজিরশাইল ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি বাজারে নাজিরশাইল চালের সংকট রয়েছে বলেও জানিয়েছেন নিউ নিলয় রাইস এজেন্সির কর্মচারী।
বাবু বাজার চালের আড়তে নাজিরশাইল চাল কিনতে এসে ক্যালকুলেটরে হিসাব কষে দেখলেন কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ১০টাকা। তিনি কতদিন আগে চাল কিনেছেন জানতে চাইলে সুজিত পাল বাংলানিউজকে বলেন, গত দুই মাস আগে আমি নাজিরশাইল চাল ৫৫ টাকায় কিনেছি আজ তা কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়ে গেছে। ৬৫ টাকা ৩০ পয়সা করে কিনতে হচ্ছে।
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সরকার টেডিং এজেন্সির কর্মচারী জানান, দেশে বন্যা পরিস্থিতির কারণে দাম বেড়েছে। তাছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে চালের গাড়ি আসতে ঘাটে আটকে থাকে। চার থেকে পাঁচ দিন আটকে থাকার পর ২০০০ টাকা ঘুষ দিয়ে সিরিয়াল পেয়ে গতকাল চালের গাড়ি এসেছে। এখন এই বাড়তি টাকা কোথায় যাবে? চালের উপরই তো পড়বো!
মায়া টেডিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আব্দুল হান্নান বলেন, দেশে বন্যা পরিস্থিতির কারণে চালের দাম বেড়েছে। এখন তা বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদের আগে থেকে কেজি প্রতি ১ থেকে ২ টাকা চালের দাম বেড়েছে জানিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, সামনের দিনে আরো বাড়তে পারে।
নিউ বশির রাইস এজেন্সির দোলন মিয়া বলেন, সিজন না হওয়ায় চালের দাম কেজি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। নতুন চাল বাজারে না আসা পর্যন্ত চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলেও খুচরা বাজারে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস।
খুচরা বাজারে ১নং মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, নরমাল মিনিকেট ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা আবার কোথাও কোথাও ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিআর আটাশ ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী বরিশাল স্টোরের খুচরা চাল বিক্রেতা সোহেল বলেন, ঈদের পরে বস্তা প্রতি চালের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।
এছাড়া আবির জেনারেল স্টোরে মিনিকেট চাল ৬০ টাকা, স্বর্ণা ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা, বিআর আটাশ ৫২ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৭
এএম/বিএস