এতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক হিসেবে ফাঁকি দেওয়া টাকা মওকুফে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেকের তদবির নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, ফাঁকি দেওয়া ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ড (এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকা) যাতে বাংলাদেশকে রাজস্ব হিসেবে দিতে না হয়, সে জন্য ব্রিটিশ হাইকমিশনার বিএটিবির পক্ষে লড়াই করছেন।
এ ঘটনা নিয়ে এর আগে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে সরকারের কাছে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের দৌড়ঝাঁপ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে চিঠি লেখা এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও আইন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল ও এনবিআরের মধ্যে বৈঠক আয়োজনের মাধ্যমে আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা-তদবিরের কথা তুলে ধরা হয়।
তামাক কোম্পানির পক্ষে হাইকমিশনারের চেষ্টা-তদবিরের সমালোচনা করে গাডির্য়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে পাকিস্তানে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি) পক্ষে দেশটির অর্থমন্ত্রীর কাছে লবিং করেছিলেন। ২০১২ সালে পানামায় নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বিএটির পক্ষে স্ক্যান্ডালে জড়ানোর পর ব্রিটিশ বৈদেশিক অফিস থেকে কর্মীদের জন্য একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, স্থানীয় কোনো নীতি যদি ব্রিটিশ তামাক কম্পানির জন্য বৈষম্য সৃষ্টি না করে তাহলে কোনো কর্মকর্তা তামাক কম্পানির পক্ষে কোনো কাজ করতে পারবেন না। বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহ দেওয়া কিংবা ব্যবসায় সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও কর্মকর্তারা তামাক কম্পানিকে কোনো ধরনের সহায়তা করতে পারবেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালাতেও কোনো তামাক কম্পানির পক্ষে সরকারের সহায়তা না করার কথা বলা আছে, যুক্তরাজ্য তাতে স্বাক্ষর করেছে।
বিএটিবি জাতীয় বাজেটে নির্ধারিত মূল্যস্তর থেকে একধাপ নিচের স্তরে নামিয়ে এনে ব্রিস্টল ও পাইলট ব্র্যান্ডের সিগারেট বিক্রি করে।
ব্র্যান্ড দুটির মূল্য কমিয়ে ফেলায় এ দুটি ব্র্যান্ডের সিগারেট থেকে সরকারের রাজস্বও কমে যায়। এনবিআর হিসাব করে দেখতে পায়, ব্র্যান্ড দুটির মূল্য না কমিয়ে আগের স্তরে রাখলে কম্পানিটির কাছ থেকে ২০০৯-১০ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত অতিরিক্ত এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক পাওয়া যেত। দাম কমানোর ফলে এই পরিমাণ রাজস্ব কম পেয়েছে এনবিআর।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর এই অর্থ দাবি করে বিএটিবিকে নোটিশ দেওয়া হয়। তাতে এনবিআর অভিযোগ করে, মিথ্যা ঘোষণা ও তথ্য দিয়ে সরকারকে এই পরিমাণ রাজস্ব কম দিয়েছে বিএটিবি। যেখানে ব্র্যান্ড দুটির সিগারেট মধ্যবর্তী মূল্যস্তরে বিক্রি করার কথা, সেখানে বিএটিবি বিক্রি করেছে নিম্ন মূল্যস্তরে।
এনবিআরের দাবির বিপক্ষে হাইকোর্টে রিট করে বিএটিবি। হাইকোর্ট রাজস্ব বোর্ডের পক্ষে রায় দিয়ে বলেছেন, বিএটিবিকে এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক দিতে হবে। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিএটিবি। এ অবস্থায় সর্বশেষ গত ৬ আগস্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে চিঠি পাঠিয়ে সমঝোতা বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক।
চিঠিতে অ্যালিসন ব্লেক লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ’র ইস্যুতে লিখছি, ‘এ বিষয়ে আমরা এর আগেও একাধিকবার আলোচনা করেছি। আমি আশাবাদী যে আপনার অফিস বিষয়টি সমাধানে আন্তরিক। ’ আদালতের বাইরে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে এনবিআর, আইন মন্ত্রণালয় ও অ্যাটর্নি জেনারেলের একটি বৈঠক আয়োজন করতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন অ্যালিসন ব্লেক।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
জেডএম/