খুচরা চাল বিক্রেতারা জানান, পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ থাকার পরও চালের সঙ্কট সৃষ্টি করা হচ্ছে। একটি সিন্ডিকেট নিজেদের ইচ্ছে মতো চালের দাম বাড়াচ্ছে, এতে রয়েছে এক শ্রেণীর অসাধু মিল মালিকেরাও।
অপরদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে মিল মালিকরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে আমাদের এখানেও চালের মূল্য বেড়েছে।
খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেওয়া হলেও মাঝে অতিরিক্ত দামে চাল কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে চাল।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিনাজপুর শহরের সর্ববৃহৎ পাইকারি চালের বাজার বাহাদুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত একসপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালে দাম বেড়েছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে। এর প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা বেড়ে গেছে।
পাইকারি বাজারে গত সপ্তাহে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। যা বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩৫০ টাকা, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬০০ টাকা, বিআর-২৯ ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর স্বর্ণা ২ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হতো, সেটি বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩৫০ টাকা। হাইব্রিড গুটি স্বর্ণা ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ২০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
পাইকারি বাজারের প্রভাব পড়েছে খুচরাতেও। একসপ্তাহ আগে বিআর-২৮ প্রতিকেজি চাল বিক্রি হয়েছে ৪৭ টাকা, যা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা করে।
মিনিকেট ৫১ টাকা থেকে বেড়ে ৫৮ টাকা, স্বর্ণা ৪২ টাকা থেকে বেড়ে ৪৭ টাকা, মোটা জাতের হাইব্রিড ৩৭ টাকা থেকে বেড়ে ৪৩ টাকা, বিআর-২৯ প্রতিকেজি ৪৬ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫২ টাকায়।
দিনাজপুর বাহাদুর বাজারে চাল কিনতে আসা শহরের বালুয়াডাঙ্গা হঠাৎপাড়া এলাকার দিনমজুর সেকেন্দার আলী বাংলানিউজকে জানান, অস্বাভাবিকভাবে চালের দাম বেড়েই চলেছে। চালের দাম বেড়ে এমন অবস্থানে দাঁড়িয়েছে যে, আমরা তা কিনতেই হিমশিম খাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে।
একই বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা মো. মামুন জানান, স্থানীয় প্রতিটি মিলে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল মজুদ রয়েছে। তারা সঙ্কট সৃষ্টি করে চালের দাম ইচ্ছে মতো বাড়াচ্ছে। তাদের মনের মতো দাম ধরিয়ে দিলে চালের অভাব নেই।
খুচরা ব্যবসায়ী আহসান উদ্দিন বলেন, আমরা যে দামে পাইকারদের কাছ থেকে কিনছি তার চেয়ে পঞ্চাশ পয়সা থেকে একটাকা লাভ রেখে প্রতিকেজি চাল বিক্রি করছি। দাম বাড়লেও আমাদের কোনো লাভ নেই। লাভ চলে যায় মিল মালিক ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের পকেটে।
এদিকে সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করে দিনাজপুর চাল কল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ব বাজারে প্রতিনিয়তই চালের দাম বাড়ছে। এর প্রভাব আমাদের স্থানীয় বাজারেও পড়েছে।
এ বিষয়ে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, অবৈধভাবে কোনো মিল মালিক মজুদ রেখে সঙ্কট সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সঙ্কট আগের মতো নেই।
এরপরও কি কারণে বাজারে চালের দাম বাড়ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
এমআইআর/এমএ