পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে বিক্রিতে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি যোগ হচ্ছে আরও ২/৩শ’ টাকা। গ্রামীণ বাজারে বস্তায় তা বেড়েছে ৫/৬শ’ টাকা।
এমন অবস্থায় সিলেটের পাইকারি ও খুচরা চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের লোকজন।
ব্যবসায়ীদের মতে, মজুতদাররা দাম বেশি চাওয়ায় তারা অনেকে চাল আমদানি বন্ধ রেখেছেন। অনেকে আমদানি অব্যাহত রাখলেও চাল ভেদে বস্তা প্রতি দুই থেকে তিনশ’ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এমনটি জানিয়েছেন সিলেটের কালিঘাট ডাকবাংলা রোডের বৃহৎ চালের আড়ৎ মালিকরা।
পোলাওয়ের চাল ছাড়া সব চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মজুতদারদের দায়ী করে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, যারা ৩০/৪০ লাখ মন চাল মজুদ রেখে বাজার বগলদাবা করে রেখেছেন, সেসব সিন্ডিকেটের চাল বাজেয়াপ্ত করা কিংবা কিনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
সরেজমিন সিলেটের বৃহৎ চালের আড়ৎ কালিঘাট ডাকবাংলা সড়ক বাজারে ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ দোকানে চাল মজুদ রয়েছে। কিন্তু দামের কোনো কমতি নেই। বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় এ বাজারেই চালের প্রকারভেদে বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ১শ’ থেকে ৩শ’ টাকা। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, ২৯ মালা বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৫৫০ টাকায়। যা আগে ছিল ২২২০ টাকা। গ্রামের বাজারের সঙ্গে এ চালের মূল্যের তফাৎ বস্তা প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। মিনিকেট-আতপ পাইকারি বাজারে ২৬০০ টাকা। খুচরা বাজারে ২৯০০ টাকা। অথচ ক’দিন আগেও এ চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হতো ২৪৫০ টাকায়। কাটারিভোগ ২৬০০ টাকার স্থলে এখন পাইকারি বাজারেই ২৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩১০০ টাকা।
ভারতীয় পরিমল ব্রান্ডের চাল (মোটা চাল) সপ্তাহ খানেক আগে ১৬৫০ টাকা বিক্রি হলেও সিলেটের বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮২০ টাকা। খুচরা বাজারে এ চালের দাম ২০০০ টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে পাইকারি বাজারগুলোতে ২১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের বাজারে এ চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৩৫০ টাকা থেকে ২৪০০ টাকায়। জিরা সিদ্ধ সপ্তাহ খানেক আগে ২৬৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৮০০ টাকা বস্তা। খুচরা বাজারে ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকায়। আর কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা। সে অনুযায়ী ৫০ কেজির বস্তার দাম পড়ে ৩১০০ টাকা।
এছাড়া পাইকারি বাজারে স্বর্ণা (সিদ্ধ) আগে ছিল ২২০০ টাকা, বর্তমানে বস্তাপ্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর খুচরা চাল বাজারের সঙ্গে গ্রামের চাল বাজারের রয়েছে বিস্তর তফাৎ। একই চালের দাম উপজেলা পর্যায়ে আরও ১০০-২০০ টাকা বাড়তি বিক্রি হচ্ছে। আর গ্রামীণ বাজারে বস্তাপ্রতি ৫/৬শ’ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের চাল ব্যবসায়ী মুরাদ মিয়া।
কালিঘাট চাল বাজারের শীর্ষ ব্যবসায়ী পাল ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী তুষার পাল বাংলানিউজকে বলেন, রাঘব-বোয়ালরা চাল মজুদ রেখে দাম বাড়াচ্ছেন। তারা ৪০/৫০ লাখ টন চাল বগলদাবা করে রেখে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সরকারের উচিত সেদিকে নজর দেওয়া। তারা দাম না কমালে আমরা কমাতে পারবো না। এরপরও অন্য জেলার তুলনায় সিলেটের বাজারে চালের বস্তা একশ’/দুইশ’ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি চালের আড়ৎদার ব্যবসায়ী সুফিয়ান অ্যান্ড ব্রাদার্সের আবু সুফিয়ান বাংলানিউজকে বলেন, আগের চাল থাকায় আমরা কমে বিক্রি করতে পারছি। দু’দিন পর নতুন চালের গাড়ি আনলে দাম আরো বাড়বে। তিনি বলেন, ‘রিউমার ছড়িয়ে চালের বাজার অস্থির করে তুলেছে ব্রান্ডেড কোম্পানি ও বড় মজুতদাররা’।
জাকির ট্রেডার্সের মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে ৫০ দিনের খাদ্য মজুদ রয়েছে কিছুদিন আগে গুজব ছড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ভারতের বাজার তথা এলসি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এ দুই কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছে। কিনতে গেলে চাল ভেদে বস্তা প্রতি ২০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
এনইউ/জেডএস