নিম্নস্তরে বর্তমানে বিএটিবির তিনটি ব্র্যান্ডের সিগারেট রয়েছে। এগুলো হলো-ডারবি, হলিউড ও পাইলট।
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে কোম্পানিটিকে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেট ৩৫ টাকা দরে বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর একই স্তরের দেশি সিগারেট প্রতি ১০ শলাকা ২৭ টাকায় বিক্রিয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নিম্নস্তরের সিগারেট প্রস্তুতকারী দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- আকিজ গ্রুপের ঢাকা টোব্যাকো, আবুল খায়ের গ্রুপ ও নাসির গ্রুপসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ৮ বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকার করফাঁকি বিএটিবি’র!
বিদেশি কোম্পানি হিসেবে বিএটিবির প্রতি যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা মানছে না কোম্পানিটি। ফলে প্রতি মাসেই শত কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বর্তমানে দেশে সিগারেটের বাজার প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে নিম্নস্তরের সিগারেটের দখলে রয়েছে মোট বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশ। সে হিসেবে নিম্নস্তরের সিগারেটের বাজার প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল বিএটিবির দখলে আছে নিম্নস্তরের বাজারের ৬৩ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিমাসে গড়ে সাড়ে ১১ কোটি টাকার নিম্নস্তরের সিগারেট বিক্রি করে। প্রতি প্যাকেটে ১০ শলাকা করে থাকলে প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠানটি নিম্নস্তরের সিগারেট বিক্রি করে সাড়ে ৪২ কোটি প্যাকেট।
নিম্নস্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ধার্য আছে ৫৫ শতাংশ হারে। এর সঙ্গে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আছে আরও ১৫ শতাংশ হারে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএটিবির প্রতি ১০ শলাকার প্যাকেট ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করার কথা। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে প্রতি ১০ শলাকা ২৭ টাকা দরে বিক্রি করে এ রাজস্ব জমা দিচ্ছে বিএটিবি। সে হিসাবে প্রতিমাসে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে নিম্নস্তরের জন্য সরকার সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা পায়। ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করলে সরকার প্রতি ১০ শলাকায় আরও পাঁচ টাকা ৬০ পয়সা হারে বেশি রাজস্ব পেতো। সে হিসেবে সাড়ে ৪২ কোটি প্যাকেটে প্রতিমাসে আরও প্রায় ২৪০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব পেতো সরকার। গত ১ জুলাই থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। সে হিসেবে এ পর্যন্ত আড়াই মাসে ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব কম পেয়েছে সরকার।
সিগারেট বিক্রিতে সরকারের নির্দেশনা কেন মানা হচ্ছে না, সে বিষয়ে জানতে বিএটিবির কোম্পানি সেক্রেটারি আজিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
এদিকে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে একাধিকবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে নিম্নমানের সিগারেট প্রস্তুতকারী দেশীয় কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। গত ১২ জুলাই অর্থমন্ত্রী বরাবর এক চিঠিতে তারা জানায়, দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পানি একই দামে পণ্য বিক্রি করলে দেশীয়রা বৈষম্যের শিকার হয়। তাই বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে বিএটিবির জন্য যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যাতে বহাল থাকে সে বিষয়ে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা টোব্যাকোর মূল প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন বলেন, তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে সরকার যে নির্দেশনা দেয় তা আমরা পরিপালন করি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে নিম্নস্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমরা তার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই।
জানা যায়, ১০ বছর আগে দেশের বাজারে নিম্নস্তরে বিদেশি কোনো ব্র্যান্ডের সিগারেট ছিল না। দেশি কয়েকটি কোম্পানি তখন নিম্নস্তরের সিগারেট প্রস্তুত করে বিক্রি করতো। ফলে তখন নিম্নস্তরের সিগারেটের চাহিদাও কম ছিল। কিন্তু দেশের বাজারে সিগারেট সরবরাহকারী সর্ববৃহৎ কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) নিম্নস্তরের সিগারেট বাজারে ছাড়ার পর থেকেই এ স্তরের সিগারেটের চাহিদা বাড়তে থাকে। ফলে ব্র্যান্ডের সিগারেট সহজলভ্য হওয়ায় নতুন নতুন ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এজন্য বিদেশি কোম্পানির ক্ষেত্রে শুল্ক-কর বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের মুখপাত্র আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে বিভিন্নভাবে সুবিধা নিচ্ছে। তাদের ব্যবসায়িক কৌশলের কাছে এনবিআরসহ সরকারি সংস্থাগুলো হার মানছে। বেশি দামের সিগারেট কম দামে বিক্রি দেখিয়ে কর ফাঁকিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠছে। কিন্তু এনবিআরসহ সরকারি দফতরগুলো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কেন নিচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এবারের বাজেটেও কোম্পানিটিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
জেডএস