ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ভারতীয় ঋণে প্রথম প্রকল্প ধীর, অগ্রগতি নেই দ্বিতীয় ধাপে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৭
ভারতীয় ঋণে প্রথম প্রকল্প ধীর, অগ্রগতি নেই দ্বিতীয় ধাপে ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানার বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত

ঢাকা: সাত বছরে মোট দুই ধাপে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভারত ঋণ দিয়েছে ৩০০ কোটি ডলার। বুধবার (০৪ অক্টোবর) আরও সাড়ে চারশ কোটি ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে তারা। ভারতীয় ঋণের লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে অর্থ ব্যবহার করছে বাংলাদেশ। কিন্তু আগের তিনশ কোটি ডলারের মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ৫০ কোটি ডলার। 

সাত বছর আগে প্রথম ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় বাস্তবায়িত আটটি প্রকল্পে ধীরগতি দেখা গেছে।  সাত বছরে আটটি প্রকল্পের একটির কাজও শতভাগ সম্পূর্ণ হয়নি(অবশ্য ঋণের অর্ধেক টাকা এখনও ছাড় করেনি ভারত)।

 

দ্বিতীয়ধাপে ২০০ কোটি ডলারে ১৪টি প্রকল্পের আওতায় এখনও ঠিকাদার নিয়োগ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগ।  এই ১৪টি প্রকল্পের অগ্রগতিও শূন্যের কোঠায়।

রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ভারতীয় প্রথম ঋণে সাত বছর আগে খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি শুরু হয়।  বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ।  তবে দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো । এর অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। তবে  ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ ও কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য।

অন্যদিকে ১২০টা ব্রডগেজ রেল কোচ প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৬ শতাংশ।  বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই) আধুনিকায়ন প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৯ শতাংশ।  আশুগঞ্জ-আখাউড়া রেল লাইনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৩ শতাংশ।

ইআরডি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় এলওসি’র আওতায় ১৪টি প্রকল্পের আওতায় ভারত দুই বিলিয়ন ডলার (২০০ কোটি ডলার) নমনীয় ঋণ (এলওসি) দেয়।  বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা (তখনকার এক ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)।  

২০১৬ সালে ৯ মার্চ দ্বিতীয় এলওসি চুক্তি হয়।  ১৪টি প্রকল্পের আওতায় এ ঋণ দেয় ভারত।  অথচ এক বছর পেরিয়ে গেলেও এসব প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য।  বাস্তবে কোনো কাজই এখনও শুরু হয়নি।   ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে সব প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগ।  তবে এখনও দু’টি প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন করা হয়নি।  তাই একটি প্রকল্পেরও ঠিকাদার নিয়োগ সম্ভব হয়নি।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, আগের দুই ধাপের ঋণের অবস্থা নিয়ে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল পর্যালোচনা সভা হয় ইআরডি সম্মেলনকক্ষে।  এই পর্যোলোচনা সভার সারসংক্ষেপ ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে অবহিত করা হবে।   তবে অরুণ জেটলি এ বিষয়ে অবহিত চাইলেই কেবল অবহিত করা হবে।

ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব (এশিয়া উইং) জাহিদুল হক এই বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন,  ভারতীয় অর্থমন্ত্রী প্রথম ও দ্বিতীয় এলওসিভূক্ত প্রকল্পের বিষয়ে যদি জানতে চান তাহলে আমরা তাকে তা জানাতে প্রস্তুত আছি।  প্রয়োজনীয় তথ্যও সংগ্রহ করেছি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ থেকে।  প্রয়োজনে তাকে (অরুণ জেটলি) সব কিছু অবগত করা হবে।  তবে আলোচনা খুব বেশি দীর্ঘ হবে না। ’এলওসিভূক্ত প্রকল্পের ধীরগতি প্রসঙ্গে জাহিদুল হক বলেন, আমাদের দৃষ্টিতে প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো।  কারণ আমাদের দেশের অন্যান্য প্রকল্পের অগ্রগতি যেমন, তেমনভাবেই এলওসিভূক্ত প্রকল্প এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করি।

দ্বিতীয় ধাপের ঋণে প্রকিউরমেন্ট অব ট্রাকস ফর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআরটিসি) প্রকল্পটি চলতি বছরের ৩০ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়।  তারপরও ঠিকাদার নিয়োগ হয়নি।

একই অবস্থা প্রকিউরমেন্ট অব ডাবল ডেকার অ্যান্ড সিঙ্গেল ডেকার এসি অ্যান্ড নন-এসি বাসেস ফর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআরটিসি) প্রকল্পটিও।  বাকি ১২টি প্রকল্পেরও কাজ বাস্তবে এখনও শুরুই হয়নি। সবকিছুই এখনো কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ।

প্রথম ধাপে ২০১০ সালে দেওয়া প্রথম এলওসির পরিমাণ ছিল ১০০ কোটি ডলার। দ্বিতীয়ধাপে ২০০ কোটি ডলার।  অরুণ জেটলির সফরে তৃতীয় ধাপের লাইন অব ক্রেডিটের(এলওসি) আওতায় আরও ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে তিন ধাপে ভারতীয় ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা(এক ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)।
বাংলাদেশ সময়:২০৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৭
এমআইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।