সারাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। তবে এজেন্টদের সংখ্যায় রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সন্দেহজনক লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগে বিকাশের ২ হাজার ৮শ’ ৮৭টি এজেন্ট অ্যাকাউন্ট এক মাসের জন্য সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক এসব সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিকাশ কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ করে দেওয়া বিকাশ এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটসহ অন্যান্য কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।
এসব এজেন্টের রকেট একাউন্ট থেকে সন্দেহজনক বা অবৈধ লেনদেন হচ্ছে কি না তা মনিটরিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো তৎপরতা নেই। ফলে এজেন্টরা রকেট একাউন্ট ব্যবহার করে অবৈধ লেনদেন করছেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মতিঝিল, উত্তরা, মগবাজার, বসুন্ধরা এলাকায় সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে বিকাশের প্রায় ২৩টি এজেন্টের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার খবর পাওয়া গেছে। যাদের সবাই রকেটের এজেন্ট হিসেবে ব্যবসা করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিকাশের ৭০ ভাগ এজেন্ট রকেট, শিওরক্যাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট হিসেবেও কাজ করছেন। এ কারণেই সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খাত সংশ্লিষ্ট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়মের অভিযোগে যেসব বিকাশ এজেন্টদের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে সেই এজেন্টরাই যদি রকেট বা অন্য মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যায় সে ক্ষেত্রে সন্দেহজনক বা অবৈধ লেনদেনের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কেননা এসব এজেন্ট ইতোমধ্যেই একটি এমএসএস প্রতিষ্ঠানের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহার করে সন্দেহজনক ও অনৈতিক লেনদেনে লিপ্ত ছিলেন। তারা যে রকেটকে ব্যবহার করেও একই ধরনের কার্যকলাপ করছেন না, এটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
তবে সন্দেহজনক লেনদেন রোধে সব কোম্পানির লেনদেন নজরদারি করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সন্দেহজনক লেনদেন বন্ধ করতে সব কোম্পানির লেনদেন নজরদারি করা উচিত। যারা বিকাশের এজেন্ট তারাই রকেট, শিওরক্যাশ, ইউক্যাশের এজেন্ট। তাই শুধু বিকাশ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করলে হবে না। অন্যসব কোম্পানির লেনদেনও নজরদারি করতে হবে।
বৈধপথে রেমিটেন্স কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি প্রতিনিধি দল কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব গিয়েছিলো। এসব দেশের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় ‘বিকাশ’ এবং ‘রকেট’-এর নাম ব্যবহার করে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের রেমিটেন্সের অর্থ গ্রহণ করতে দেখেছে প্রতিনিধি দল।
প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, অনিয়মের অভিযোগে যেসব বিকাশ এজেন্টদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তাদের রকেটসহ সব এমএফএস এজেন্ট অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দেওয়া। তাহলে বৈধপথে রেমিটেন্স কিছুটা হলেও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আইন সবার জন্য একভাবে প্রয়োগ করা হবে। বিকাশ এজেন্ট বন্ধ করার পর রকেট এজেন্টও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনিয়ম পেলেই বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমাদের একটি টিম এজন্য মাঠে কাজ করছে। কেউ বাদ যাবে না। প্রত্যেক কোম্পানির লেনদেন তদন্ত করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা জানান, সন্দেহজনক লেনদেন রোধে সব কোম্পানির লেনদেন নজরদারি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৭
এসই/এমজেএফ