কিন্তু সভ্যতার চরম উৎকর্ষের যুগে আস্তে আস্তে হারিয়ে গেছে বহুল নকশায় বর্ণিত সেই রাজকীয় খাট-পালঙ্ক। ‘খাট-পালঙ্ক’ শব্দটাও এখন আর ব্যবহার হয় না।
তবে পুরোনোর প্রতি মানুষের আগ্রহ আবার ফিরে এসেছে। ফার্নিচার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ডিজাইনে ফিরিয়ে এনেছে অতীত ঐতিহ্য। মধ্যযুগের ‘নকশায়’ দিয়েছে আধুনিকতার প্রলেপ। আর এগুলোর সমারোহ এখন রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)।
পাঁচ দিনব্যাপী জাতীয় ফার্নিচার মেলায় প্রায় অর্ধ শত দেশীয় কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ফার্নিচার নিয়ে হাজির হয়েছে। ঠিক যে সময় মানুষের চাহিদা, রুচি ও সাধ্যের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বড় কোম্পানিগুলোর স্লোগান হয়েছে ‘স্লিম ইজ স্মার্ট’, ঠিক সেই সময় বেশ কয়েকটি দেশীয় কোম্পানি রাজকীয় ফার্নিচার তৈরি করছে।
মেলায় আসা ‘নিউ বেঙ্গল’ ফার্নিচারের বেশিরভাগ পণ্যের ডিজাইনে রয়েছে রাজকীয় অবয়ব। এ কোম্পানির খাট, সোফা, ডাইনিং টেবিল-চেয়ার, ডিনার অগান, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল ও সেন্ট্রাল টেবিলসহ সব পণ্য-ই নান্দনিক ডিজাইনে করা। ঠিক যেন পুরনো আমলের রাজ-রাজাদের ঘর সাজানো খাট-পালঙ্কের সমারহ।
ভারী এ ফার্নিচারগুলোর দামও অনেক চড়া। মেহেগুনি, সেগুন, ওক কাঠের তৈরি ফার্নিচার মোটা-মুটি উচ্চ মধ্যবিত্তের কথা মাথায় রেখেই বানানো হয়েছে বলে জানালেন নিউ বেঙ্গল ফার্নিচারের কর্ণধর মো. এরশাদ।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সলিড কাঠ দিয়ে তৈরি এ ফার্নিচার একবার কিনলে কয়েক যুগ ব্যবহার করতে পারবেন। ব্যবহারে আভিজাত্যও ফুটে উঠবে। উৎপাদন ব্যয় অন্যদের চেয়ে বেশি হওয়ায় দামও একটু বেশি ধরতে হয়েছে। কিন্তু গুণগত মানের দিক থেকে অন্য যে কোনো ব্রান্ডের চেয়ে এগিয়ে থাকবে নিউ বেঙ্গল।
ফার্নিচারে ঐতিহ্য এবং আভিজাত্যের ছোঁয়া আনার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে আছে এলিগেন্ট ফার্নিচার। দেশি কাঠে তৈরি এ কোম্পানির প্রায় সব পণ্যে রয়েছে রাজকীয় ছোঁয়া। বেডরুম সেট, সোফা সেট, ডাইনিং রুম সেটসহ এদের বেশিরভাগ পণ্য ভারী কাঠে তৈরি।
দেশের নামকরা ব্রান্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন এ ফার্নিচার কোম্পানি তাদের উৎপাদিত পণ্যের ডিজাইনের ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের সমন্বয় ঘটিয়েছে। এলিগ্যান্টের পণ্যও অন্য যে কোনো কোম্পানির ফার্নিচারের চেয়ে একটু বেশি দাম ধরা হয়েছে বলে ক্রেতাতের পর্যবেক্ষণ।
কথা হয় মেলায় ফার্নিচার কিনতে আসা সৈয়দ হেদায়েত হোসেন রঞ্জুর সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন- এলিগেন্ট ফার্নিচারের ডিজাইন খুব মনে ধরেছে। কিন্তু দামটা অন্যদের চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে।
দাম বেশির কারণ জানতে চাইলে এলিগেন্ট ফার্নিচারের হেড অব বিজনেস নুসরাত জাহান শামিমা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ভিক্টোরি ডিজাইনের ফার্নিচারগুলো উৎপাদন কস্ট অনেক বেশি। যারা কিনতে আসবেন, তারা বিষয়টি মাথায় রেখেই কিনবেন। প্লেন সেইফ ফার্নিচারের চেয়ে ডিজাইন ফার্নিচারের মেকিং খরচ আকাশ-পাতাল তফাত।
নতুন এ কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি নামকরা পুরোনো কোম্পানি ‘হাতিল’, ‘ব্রাদার্স’, ‘হাইটেক’, ‘নাভানা’, ‘আখতার’, ‘নাদিয়া’, ‘পারটেক্স’, ‘অটোবি’ ও ফার্নিচার ডিজাইনের ক্ষেত্রে ‘রাজকীয়’ লুক আনার চেষ্টা করেছে।
কথা হয় নাদিয়ার জোনাল ম্যানেজার মো. হেদায়েত উল্লাহ’র সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ক্রেতাদের রুচি ও চাহিদার উপর নির্ভর করে আমরা কেমন ডিজাইনের ফার্নিচার তৈরি করব। সেক্ষেত্রে একদিকে যেমন সিম্পল ডিজাইন পছন্দ করা মানুষ আছে। অন্যদিকে গর্জিয়াস ডিজাইনও অনেক পছন্দ করেন। সবার কথা মাথায় রেখেই আমরা ফার্নিচারের ডিজাইন ঠিক করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৭
এজেড/এসএইচ