সূত্রমতে, ১৯৫৬ সালে খামারটি তৈরিতে ২০ একর খাসজমি বরাদ্দ দেওয়া হয় বিএডিসিকে। ১৯৬১-৬২ সালের দিকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অন্তর্ভুক্ত হয় এটি।
এরপর পুরোদমে সচল থাকা খামারটিতে বছরে ১ লাখ হাঁস ও ১ লাখ মুরগি পালন করে লাখ লাখ ডিম ও বাচ্চা উৎপাদিত হতো। যা বেকারদের কর্মসংস্থান, বরিশাল শহর ও আশেপাশের এলাকার মানুষের আমিষের ঘাটতি পূরণ এবং সরকারের আয়ের উৎসে পরিণত হয়।
কিন্তু জনবল ও পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে ২০০০ সালের পরে ধীরে ধীরে খামারটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালের দিকে ফের চালু হলেও খামারের প্রায় ২ একর সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে।
বার্ড-ফ্লু’র সংক্রমণে এক সময় মুরগির সঙ্গে হাঁসের পালন ও প্রজনন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ যান্ত্রিক ত্রুটিতে শুধুমাত্র মুরগির বাচ্চা উৎপাদন ও প্রজননের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়ে বর্তমানে খামারটি চলছে কোনোমতে।
তবে ফার্মের ১৬টি কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদের মধ্যে মাত্র একটি শূন্য থাকায় জনবলের সংকট নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১২ শেডের খামারের প্রবেশমুখ ছাড়া অন্য তিনদিক ঘিরে মৎস্য চাষবিহীন সুবিশাল লেক রয়েছে। প্রতি মঙ্গলবার ফার্মের সীমানার বাইরে ৭ টাকা পিস ডিম বিক্রি হয়। উৎপাদন অনুসারে প্রতিমাসে বেশ কয়েকটি নির্ধারিত তারিখে মুরগির বাচ্চাও বিক্রি করা হয়। সেগুলো সারা বছর প্রতিটি ২০ টাকায় বিক্রি হলেও নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের দর ১৫ টাকা। ৭০ সপ্তাহের বেশি বয়সের মুরগি ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে।
পোল্ট্রি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, খামারের চারদিকের তিনদিকেই লেক থাকায় জীবাণুর আক্রমণ নেই বললেই চলে। প্রবেশদ্বারেও রয়েছে বিশেষ সতর্কতা।
তিনি জানান, অ্যান্টিবায়েটিকবিহীন এ খামারে বর্তমানে ১ হাজার ৬৩৪টি মুরগি ডিম উৎপাদন করছে। চলতি বছরে ২ লাখ ৭০ হাজার ডিম ও ১ লাখ ২০ হাজার বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। সে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে ডিম উৎপাদন সম্ভব হলেও ইনকিউবেটরের (হ্যাচিং মেশিন) চারটি কম্পার্টমেন্টের তিনটিই নষ্ট থাকায় বাচ্চা উৎপাদনে গিয়ে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। এর প্রতিটি কম্পার্টমেন্টে ১০ থেকে ১২ হাজার ডিমের বাচ্চা ফোটানো যায়।
বছরে ৩০ হাজার মুরগি পালনের কথা থাকলেও এখন ৫ হাজারের মতো মুরগি রয়েছে খামারে। তবে ইনকিউবেটর ঠিক হলে সবকিছুর উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
খামারের সহকারী পরিচালক ডা. রেজাউল করিম জানান, খামারে ফাওমি, সোনালী ও আরআইআর মুরগির জাত রয়েছে। এখানকার বাচ্চা ও ডিমের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আর সকল সমস্যার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে সমাধান করা সম্ভব।
তিনি জানান, তবে বর্তমানে খামারের জায়গায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও আবাসন নির্মাণের কথা চলছে। জেলা প্রশাসন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে ২৫ শতাংশ জমি লিজের আবেদন জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। জমি পরিদর্শনও করে গেছে জেলা প্রশাসন।
কোলাহলমুখর পরিবেশে খামার হয় না। তাই এখানে কমপ্লেক্স ও আবাসন তৈরি হলে কোনোভাবেই খামারটিকে রক্ষা করা যাবে না বলেও দাবি করেন ডা. রেজাউল করিম।
তবে যে পাশে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও আবাসন নির্মিত হবে, সেখানকার সঙ্গে খামারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন বরিশাল সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আ. রব।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
এমএস/এএসআর