ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সেবা ও আস্থার শীর্ষে গ্রীন ডেল্টা

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
সেবা ও আস্থার শীর্ষে গ্রীন ডেল্টা গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমডি ফারজানা চৌধুরী। ছবি: শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজ

ঢাকা: অন্যান্য বিমা কোম্পানির পরিচালকরাও বিমা করতে আসছেন গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে-এমন কথা হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইবেন না। কিন্তু কথা সত্যি। প্রতিযোগিতামূলক বাজারেও অন্যান্য বিমা কোম্পানির খোদ পরিচালকরাও আসছেন এখানে পলিসি করছেন। 

সেবা ও আস্থা কোন পর্যায়ে গেলে অন্য কোম্পানির পরিচালকরা আকৃষ্ট হতে পারে! তারই অনন্য নজির স্থাপন করেছে বিমা খাতে সবচেয়ে বড় কোম্পনিটি।  

১৯৮৫ সালে পথচলা শুরু করা দেশীয় এই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটি এরই মধ্যে মার্কেট লিডারে পরিণত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার প্রথম বছর থেকেই শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
 
প্রত্যয়ের সঙ্গেই এমনটা বলছিলেন গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফারজানা চৌধুরী।  

গ্রিন ডেল্টা সম্পর্কেও বিস্তারি বললেন কোম্পানিটির সিইও ও এমডি ফারজানা চৌধুরী। সম্প্রতি তার নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি জানান, বিমা খাতের গতানুগতিকতা বদলে দিয়েছে গ্রীন ডেল্টা। গৎবাঁধা বিমার বাইরে এসে নতুন নতুন ক্ষেত্র যুক্ত করে এ খাতে পাইওনিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি আর্বিভূত হয়েছে। তাদের দেখানো পথেই এখন হাঁটছেন অনেকে।
 
জানা যায়, গ্রীন ডেল্টাই দেশে প্রথম লকার বিমা চালু করে। এরপর প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী বিমা, নারীদের জন্য ‘নিবেদিতা’ বিমাসহ বেশ কিছু নতুন প্রোডাক্ট যুক্ত করে। সময় ও প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানুষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কোম্পানিটি নতুন করে ডিজিটাল বিমা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।  

গ্রীন ‘ডেল্টা’র নিবেদিতা এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও সমানভাবে সমাদৃত। নিবেদিতা ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য অবদান রাখায় বাংলাদেশের প্রথম এসডিজি পায়োনিয়র হিসেবে তাকে স্বীকৃত দিয়েছে জাতিসংঘের গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট। সম্প্রতি তিনি ইও গ্লোবালের কাছ থেকে পুরস্কার নিয়েছেন।
 
বিমা জগতের ‘আইকন’ এই প্রতিষ্ঠানটিকে অনুসরণ করে অনেক নতুন কোম্পানি এ খাতে পা রাখতে শুরু করেছে। যে কারণে আধুনিক ইন্স্যুরেন্স খাতের পাইওনিয়ার বলা হয় গ্রীন ডেল্টাকে।
 
প্রতিষ্ঠানটির এমডি ফারজানা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বিমার গুরুত্ব কম, কিন্তু দেশের বাইরে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এতে এক দিকে যেমন সচেতনতার অভাব, তেমনি আইনেরও দুর্বলতা এবং কিছু কিছু বিমা কোম্পানির কারণেও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। গ্রীন ডেল্টা সেই আস্থার সংকট দূর করতে কাজ করে যাচ্ছে।
 
তিনি বলেন, একটা সময় গ্রাহকদের বিমা দাবি নিয়ে অনিয়ম ও ভোগান্তি ছিলো। বিমা কোম্পানিগুলো ক্লেইম দিতে প্রবলেম করতো। যার কারণে এখন মানুষ আস্থার সংকটে ভুগছে। তবে এখন অনেক কোম্পানি এসেছে। প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, ফলে বেশির ভাগ বিমা কোম্পানি দ্রুত ক্লেইম দিয়ে দিচ্ছে।
 
‘গ্রীন ডেল্টা ইজ দ্য হায়েস্ট ক্লেইম প্রোভাইডার ইন দিস কান্টি’ এমন মন্তব্য করে ফারজানা চৌধুরী বলেন, আমরাই সবেচেয়ে বেশি ক্লেইম দিচ্ছি। বড়বড় ক্লেইমগুলো গ্রীন ডেল্টাই দিয়েছে। ব্যক্তির ও প্রতিষ্ঠানের ছোট ক্লেইমগুলো ৭ থেকে ১০দিনের মধ্যে গ্রাহকদের পরিশোধ করা হচ্ছে। ২১ দিনের মধ্যে হেলিকপ্টারের বিমা দাবি পরিশোধ করে গ্রীন ডেল্টা রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
 
‘আর এসব কারণেই বিভিন্ন বিমা কোম্পানির পরিচালকরাও গ্রীন ডেল্টাতে পলিসি করতে আসছেন,’ যোগ করেন তিনি।
 
কোম্পানিটির বিভিন্ন প্রোডাক্ট সম্পর্কেও বিষদ বলেন বাংলানিউজকে।  ছবি: শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজ

বড় বিমা দাবি (ফ্যাক্টরি ক্লেইম) কত দিনে পরিশোধ হয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে ফারজানা চৌধুরী বলেন, সাধারণত তিন মাসের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়। তবে সার্ভেয়ারের রিপোর্ট  এবং পুনঃবিমার অর্থ ছাড়ে দেরি হলে কখনও একটু সময় বেশি লেগে যায়।
 
সাধারণ বিমা করপোরেশনে (এসবিসি) রি-ইন্স্যুরেন্সে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় কি না? জবাবে তিনি বলেন, নিয়ম অনুসারে এসবিসিতে ৫০ শতাংশ রি-ইন্স্যুরেন্স সবাইকে করতে হয়। রি-ইন্স্যুরেন্সের এই টাকা দিতে এসবিসি অনেক সময় দেরি করে। অথচ বাইরের দেশে বাকি ৫০ শতাংশের টাকা দ্রুত দিয়ে দেয়। ফলে আমাদের এখানে বিমা সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।
 
তিনি বলেন, ক্লায়েন্ট এসবিসি কিংবা বাইরের দেশের কোম্পানিকে চেনেন না। আমরা কার সঙ্গে রি-ইন্স্যুরেন্স করছি, তা নিয়েও তাদের মাথা ব্যথা নেই। তারা জানেন গ্রীন ডেল্টাকে। ক্লাইন্ট তাদের টাকা দ্রুত চান।
 
অনেকে সময় বড় ফ্যাক্টরি কিংবা ব্যবসায়ীদের যাতে ক্ষতি না হয়, সেজন্য গ্রীন ডেল্টা অন-অ্যাকাউন্ট থোক বরাদ্দ থেকে ক্লেইমের কিছু টাকা দিয়ে দেয় বলেও জানান কোম্পানিটির এমডি ফরজানা।
 
তার ভাষ্য, ‘রি-ইন্স্যুয়ার ও ক্লায়েন্টদের রিকোয়ারমেন্ট ফুলফিল করতে পারছে না। অন্যান্য বিমা কোম্পানির মতো রেইটে দিতে পারছে না। ফলে কি হচ্ছে আমাদের দেশের বড় বড় প্রজেক্টের বিমা বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ’ 
 
এক প্রশ্নের জবাবে গ্রীন ডেল্টার এমডি বলেন, বিমা ব্যবসা করতে এসবিসির তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ ফেস করতে হয় না। এসবিসি পারুক বা না পারুক সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের বিমা তারা করবে। এটা ঠিক না। এসসিবি যদি বিমা করতে না পারে তবে প্রাইভেট সেক্টরে দিয়ে দিক। ব্যবসা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকুক। কারণ বিমা ব্যবসায় প্রাইভেট কোম্পানি যতো আসবে সেবার মান ততো বাড়বে। তাতে দেশের টাকা দেশেই থাকবে।

এক্ষেত্রে এসবিসিকে আরও শক্তিশালী করার পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, সেখানকার কর্মীদের প্রফেশনাল হিসেবে গড়তে দেশের বাইরে পাঠিয়ে প্রশিক্ষিত করা উচিত। যাতে তারা ক্লেইম পেমেন্ট দ্রুত করতে পারেন।
 
গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের এমডি ও সিইও ফারজানা চৌধুরী।  ছবি: শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজবিমা কোম্পানি ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান আইডিআরএ-এর আইন কতটুকু বাস্তব সম্মত? জবাবে বলেন, পাকিস্তান আমলের নিয়ম অনুসারে বিমা কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট এক্সপেন্স অনেক হাই। পুরানো আইন দিয়ে এখন বিমা বিধিগুলো হয়ে আসছে। এগুলো যুগপোযোগী করা উচিত।
 
‘বিমা খাতের অনৈতিক প্রতিযোগিতা বন্ধের আইডিআরএ শক্ত করে নজরদারি করতে হবে। এক সময় ব্যাংকিং সেক্টরে ইচ্ছামত ডিপোজিট রাখা হতো। সেটা একটা পর্যায়ে চলে এসেছে। এ জন্য আইনের পাশাপাশি যে কোম্পানিগুলো ভালো করছে, তাদের পুরস্কার, অসৎদের জন্য শাস্তির বিধান চালু করতে হবে। ’ প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিল।

ফারজানা চৌধুরী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সঙ্গে এমকম ডিগ্রি লাভ করেন। পরে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন বেসরকারিখাতের ব্র্যাক ব্যাংকে।
পরে অস্ট্রেলীয় সরকারের বৃত্তি নিয়ে মোনাশ ইউনিভার্সিটি মেলবোর্ন থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন।  

এসএমই ব্যাংকিং খাতে ইতোমধ্যে তিনি একজন দক্ষ ব্যাংকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এই নির্বাহী।  

নারীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় গ্রীন ডেল্টার ‘নিবেদিতা’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে; জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে ফারজানার এ মডেলটি বেশ প্রশংসাযোগ্য।

ব্যাংকিং খাতে অসামান্য ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ‘নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশন’ তাকে ‘বেগম রোকেয়া শাইনিং পারসোনালিটি অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছে। বিমা ও মাইক্রো ফিন্যান্সের ক্ষেত্রেও বহুমুখী অভিজ্ঞতা রয়েছে ফারজানার ঝুলিতে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
এমএফআই/এসআই/এসএইচ/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।