মুহূর্তে কয়েলদারকে ঘিরে উপস্থিত ব্যাপারিরা আবারও নতুন করে মাছের ডাক শুরু করেন। ব্যাপারির দাম ধরে কয়েলদার হাঁকতে থাকেন এই এগারো এগারো, বারো বারো, ষাট ষাট।
সে অনুযায়ী আড়তদারের লোকজন ব্যাপারিদের কাছ থেকে মাছের নির্ধারিত টাকা নিয়ে সরকারের হাতে বুঝে দেন। তবে অনেক ব্যাপারি মাছ বাকিতেও ক্রয় করেন। সেক্ষেত্রে সরকার নির্দিষ্ট দাগের পাশে ব্যাপারির নাম লিখে রাখেন। বাকি পরিশোধ সাপেক্ষে সেই দাগ কেটে দেন।
ঢাকা-নাটোর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের গোলচত্বর থেকে কিছুটা পশ্চিমে গিয়ে দক্ষিণে একটি সড়ক নেমে গেছে। মূলত এই সড়কটি সোজা সিরাজগঞ্জ মাছের আড়তে নিয়ে যাবে। এই আড়তে প্রত্যেক দিন বড় বড় তাজা তাজা মাছ বিক্রি হয়ে থাকে।
আড়তদার মহাদেব ও স্বদেব বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৮টা এবং ১০টা থেকে দুপুর নাগাদ দু’বেলা এ আড়তে মাছ বিকিকিনি হয়। ভোরের বাজারে বড় আকারের বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ বিক্রি হয়। এরমধ্যে কাতল, রুই, মৃগেল, সিলভার, বিগহেড, বাঘাইড়, আইড়, পাবদা, শিং, মাগুর, গুলসা, টেংরা, শিং, পুঁটি, মোলা মাছ অন্যতম।
রাজশাহী, নাটোর, বানেশ্বর, পাবনা, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, বগুড়াসহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহর থেকে চাষিরা এসব মাছ বিক্রি করতে এ আড়তে আসেন। পরিবহনের কাজে ব্যবহার করেন ছোট ও মাঝারি আকারের পিকআপ। অবশ্য কেউ কেউ ভটভটিও ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ কায়দায় মাছগুলো জ্যান্ত অবস্থায় আড়তে নিয়ে আসা হয়।
ভোরের বাজার ধরতে চাষিরা ভোর ৫টার মধ্যে আড়তে মাছ নিয়ে হাজির হন। ব্যাপারিরা আরও আগে আড়তে আসেন। দূর-দূরান্তের অনেক ব্যাপারি ভোরের বাজার থেকে মাছ কেনার জন্য আগের দিন বিকেলে এসে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। এর মধ্যে ঢাকা, কালিয়াকৈর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, এলেঙ্গা, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, বগুড়া, শেরপুর, সিরাজগঞ্জের ব্যাপারিরা অন্যতম।
ঘড়ির কাঁটা সকাল ৬টায় পৌঁছামাত্র গাড়ি থেকে মাছ নামানো শুরু হয়। স্ব স্ব আড়তে নিয়োজিত শ্রমিকরা গাড়ি থেকে মাছ নেমে পাল্লায় ভরেন। প্রায় প্রত্যেক আড়তের শ্রমিকরা বড় বড় মাছ উঁচিয়ে ব্যাপারিদের আড়তে ভিড়াতে হাঁকডাক শুরু করেন।
এই বড় বড় কাতলের ব্যাপারি, রুই মাছের ব্যাপারি, সিলভার ও বিগহেডের ব্যাপারি আড়তে চলে আসেন। বড় বড় তাজা তাজা মাছ কিনে নিয়ে যায় বলে হাঁকডাক ছাড়তে থাকেন। একইভাবে অন্যান্য মাছের নাম ধরে ব্যাপারিদের ডাকা হয়। ব্যাপারি দামদর করে চাহিদামতো মাছ কেনেন। পরে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন যানবাহন যোগে ছোটেন তারা।
গণেশ, আওলাদ, গোসাইসহ একাধিক ব্যাপারি বাংলানিউজকে জানান, বড় বড় ও তরতাজা জ্যান্ত মাছের জন্য এ আড়তের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। প্রত্যেক দিন এখান থেকে মাছ কেনা হয়। পরে নিজ এলাকার বাজারে গিয়ে সেই মাছ বিক্রি করা হয়। অনেক দিন লাভ হয়। আবার লোকসানও হয়। তাই বলে তো আর হাত গুটিয়ে বসে থাকলে জীবন চলবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএস