দেশটির ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি গ্রুপ লিমিটেডের নির্বাহী সভাপতি মোসহাবাব আব্দুল্লাহ আলকাতানির নেতৃত্বে ২১ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধি দল গত ০৪ থেকে ০৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফর শেষে এ প্রস্তাব দেন।
সফরকালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের উপস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন তারা।
এরই মধ্যে চট্টগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও ভোলায় সার কারখানা করার কথা চূড়ান্ত হলেও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থান নির্ধারিত হয়নি বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় জানায়, ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ভোলার প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে ডাই অ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানা করতে চায় সৌদি আরব। দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এ বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
ইতোমধ্যে আল বাওয়ানি কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে সৌদি-জিসিসি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। গত জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জেদ্দা সফরকালে বিনিয়োগের সমঝোতার ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবের প্রস্তাবটি এসেছে। এ বিনিয়োগ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রামের মিরসরাই অঞ্চলে দুই হাজার একর জমি চিহ্নিত করেছে বেজা।
একই সঙ্গে কর্ণফুলী পেপার মিলসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি নতুন কাগজকল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সিমেন্ট কারখানা নির্মাণ এবং কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি।
সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় সৌদি আরব।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা বলেছি, সবক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করবো। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় বাংলাদেশে বাণিজ্য বাড়াতে সৌদি ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সে আহ্বানে সাড়া দিয়েই এ বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন তারা’।
সৌদি বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে সে দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরকে যুগান্তকারী বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘তারা বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন, এতে আমরা অত্যন্ত খুশি। তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক আছে। কিন্তু সেটি খুব বেশি স্ট্রাকচারড নয়, একটু ইনডিভিজুয়াল অ্যাফোর্ডের ওপর নির্ভরশীল ছিল। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, এটি স্ট্রাকচারড হবে, এতে সম্প্রসারিত বাণিজ্য অনেক বেশি হয়। এখানে অনেক পার্টির সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হল, সুতরাং সেখানে সুবিধা হল’।
‘অন্য সুবিধা যেটি হল, একজন অভিযোগ করলো, আমাদের এতো প্রোডাক্ট আছে, এগুলো আমরা ততোটা প্রচার করি না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিচিতি সাধারণ গার্মেন্টস্ দিয়ে। কিন্তু এখন আমরা এতোভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়েছি যে, আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রফতানির যথেষ্ট সক্ষমতা আছে। সেদিক দিয়ে এটি উল্লেখযোগ্য সফর হয়েছে বলে আমরা মনে করি’।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা বিদ্যুৎ, সৌরপ্যানেল ও সার কারখানায় বিনিয়োগ করলে তাদের সঙ্গে দেশের বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) বাংলাদেশে ৬০ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে দেশটি। বিপরীতে আমদানি করেছে ১৮ কোটি ৫২ লাখ ১০ হাজার ডলারের পণ্য। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৪২ কোটি ২ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ঘাটতি ছিল ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছরে সৌদির সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৭
আরএম/এএসআর