ইটভাটায় ইট পোড়ানোর ফলে ওই জমি ছাড়াও মাটির উর্বরতা হারিয়ে নষ্ট হচ্ছে পাশের ফসলিজমিও।
বাংলাদেশে অদক্ষ ও পরিবেশ দূষণকারী ফিক্সড চিমনি ক্লিন (এফসিকে) পদ্ধতিতে ইট তৈরি করা হয়, যা আধুনিকও নয় বলে জানিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই)।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এভাবে ইট তৈরিতে লাগাম টেনে ধরার মাধ্যমে কৃষিজমি ও পরিবেশ রক্ষায় দেশে জাপানি প্রযুক্তিতে ইট তৈরির সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে প্রত্যাশিত ফলাফল পেয়েছে সরকার। এবার তাই দেশেই পাওয়া ড্রেজিং মাটি, রাসায়নিক উপাদান, পলিমার ও পানির সংমিশ্রনে উচ্চচাপের মেশিনের সাহায্যে জাপানি ওই প্রযুক্তিতে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমান পদ্ধতিতে আগুনে তৈরি ইটের তুলনায় এগুলো শক্তিশালী ও ব্যয় সাশ্রয়ী হবে, কোনো জ্বালানি খরচ হবে না।
এইচবিআরআই সূত্র জানায়, প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব এ ননফায়ার্ড ইট উৎপাদনের কৌশল বের করা হবে। বর্তমানে বিভিন্ন নদ-নদীতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সেসব প্রকল্প থেকে ড্রেজিং সয়েল সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ইট তৈরি করা হবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বর্তমানে বৈধ-অবৈধ মিলে ১৫ হাজার ইটভাটা রয়েছে। একটি ইটভাটা তৈরি করতে গড়ে মোট তিন থেকে দশ একর কৃষিজমির দরকার হয়। এ জমিকে করা হয় সম্পূর্ণ বৃক্ষহীন ও সমতল। ভাটা বন্ধ হওয়ার পরও ওই জমিতে দীর্ঘদিন তেমন ফসল হয় না। কারণ, ইটের টুকরো ও বালির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় জমির উর্বরতা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।
ইট উৎপাদন শিল্প থেকে প্রতি বছর ৯ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড ও পার্টিকুলেট ম্যাটার নির্গত হয়, যা নগর এলাকার পরিবেশ দূষণ করে। গ্রিন হাউজ গ্যাস নি:সরণের বড় উৎসও এ শিল্প।
একটি ছোট আকারের ভাটাতেও বছরে তিন থেকে পাঁচ লাখ এবং বড় ভাটায় ৬ থেকে ৫০ লাখ ইট তৈরি করা হয়। মাটি লাগে প্রায় ৩১ হাজার ৩৭৪ থেকে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫০ ঘনফুট। পোড়ানো ইটের ওজন প্রায় তিন কিলোগ্রাম।
বর্তমানে ঘর-বাড়িসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৭ দশমিক ২ বিলিয়ন পিস ইট তৈরি করা হয়। আগামী ১০ বছরে এর বৃদ্ধির হার ২ থেকে ৩ শতাংশ হবে।
এইচবিআরআই সূত্র জানায়, প্রতি মিলিয়ন ইট উৎপাদনে প্রায় ২৪০ টন লো-গ্রেড কয়লা পোড়াতে হয়। এ শিল্পে প্রতি বছর ৪৫ মিলিয়ন টন কাদার প্রয়োজন হয়, যা মাটি ক্ষয় করে। কাদা অপসারণেও বছরে ৮০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের মহাসচিব ড. এম এ মতিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের বিরোধিতা করছি না। তবে এভাবে ইট তৈরির পদ্ধতি চলতে থাকলে একদিন কৃষিজমি শেষ হয়ে যাবে। সরকারকে আধুনিক পদ্ধতিতে ইট তৈরি করতে হবে কৃষিজমি বাঁচিয়ে। তা না হলে ১৫ হাজার ইটভাটা বাংলাদেশের জমি শেষ করে ফেলবে’।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এস এম আরিফ-উর-রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ছোট দেশ। ইট তৈরিতে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে, কমে যাচ্ছে কৃষিজমি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে টপ সয়েলও। এটি থেকে দেশকে রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই জাপানি প্রযুক্তির ব্যবহারে ড্রেজিং করা মাটি দিয়ে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরি করবো’।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর