হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প কারখানাগুলো সাভারে সম্পূর্ণ স্থানান্তরিত হয়নি। তবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫৪টি ট্যানারিকে।
সরেজমিনে জানা গেছে, গোকুলের বড় ছেলে নজরুল ইসলাম হিরা ট্যানারিটির বর্তমান মালিক। এ স্থানেই নতুন করে চামড়ার ফিনিশড পণ্য, ব্যাগ, জুতা-স্যান্ডেল ও বেল্টের কারখানা গড়তে চান তিনি। কিন্তু পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এখনই সে স্বপ্ন পূরণ করতে পারছেন না। আগে চামড়া শিল্পের ট্যানিং ড্রাম খুলে ফেলতে হবে তাকে। তবেই শর্তসাপেক্ষে পাওয়া যাবে সব ইউটিলিটি সংযোগ।
হিরা বাংলানিউজকে জানান, ‘বিশাল গর্জন ও সেগুন কাঠের এ ট্যানিং ড্রামই চামড়া শিল্পের প্রধান যন্ত্রাংশ। কারণ, এর মাধ্যমেই কাঁচা চামড়ায় ওয়েট-ব্লু থেকে ফিনিশড পণ্য উৎপাদিত হয়। এটি খুলে ফেলা মানেই ট্যানারি বন্ধ হয়ে যাওয়া। বাধ্য হয়েই তিনটি ড্রাম খুলে ১৫ হাজার টাকা করে মাত্র ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। যেগুলোর প্রতিটিরই আসল মূল্য ৯ লাখ টাকা করে’।
জুতা কারখানায় নতুন স্বপ্ন দেখতে ক্ষতিতে সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
হাজারীবাগে মোট ট্যানারির সংখ্যা ছিল কমপক্ষে ২০০টি৷ মোট জমির পরিমাণ ৭০ বিঘা। এ জমিকে কাজে লাগিয়ে চামড়ার ফিনিশড পণ্য তৈরির কারখানা গড়ার পরিকল্পনা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের চামড়া জাতীয় পণ্যের সুনাম রয়েছে হংকং, চীন, বেলজিয়াম, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্পেন, ইতালিসহ বেশ কিছু দেশে। তাই এখানে সে ধরনের কারখানা হলে তাদের পাশাপাশি লাভবান হবে দেশও।
ট্যানারি স্থানান্তরে হাজারীবাগ থেকে পরিবারসহ সাভারে চলে গেছেন অনেক শ্রমিক। কিন্তু স্থানান্তরিত হতে না পারা কারখানার শ্রমিকেরা বেকার হয়ে গেছেন। পরিবার-পরিজনকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন তাদের অনেকে।
তবে এখানে ফিনিশড পণ্য উৎপাদনের কারখানা হবে ভেবে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন বেকার শ্রমিকরাও।
ট্যানারি শ্রমিক রাশেদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে এখন সবকিছু বন্ধ। চলছে কেবল আসা-যাওয়া আর খাওয়া-দাওয়া। কাজ-কর্ম নেই, ছেলে-মেয়েদের স্কুলও নেই। ফ্যামিলি সব চলে যেতে হচ্ছে। এখানে ওয়েটব্লু রেখে ফিনিশড কাজটাও যদি রাখতো, তাহলেও আমরা চলতে পারতাম। এখন কি আর করা!’
ট্যানারি শ্রমিক হাবিব বলেন, ‘এখন কোনো কাজ-কর্ম নেই, বসে বসে খাই। ছেলে হাজারীবাগের স্কুলে ভর্তি, তা না হলে সবাইকে নিয়ে নাটোরে চলে যেতাম। সাভারেও থাকার মতো পরিবেশ নেই। সরকার যেন হাজারীবাগে চামড়ার জুতা কারখানা তৈরি করতে দেয়’।
সাভারে স্থানান্তরিত ভূঁইয়া লেদার কমপ্লেক্সের মালিক নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘হাজারীবাগে ১৬ কাঠা জমি পড়ে আছে আমাদের। সরকার অনুমতি দিলে জুতা ফ্যাক্টরি করার পরিকল্পনা আছে। জার্মানিতে বাংলাদেশি জুতার সুনাম অনেক। এখানে চামড়াজাত পণ্যের কারখানা গড়ে উঠলে এ শিল্প পোশাকখাতকে ছাড়িয়ে যাবে। আমার মতো হাজারীবাগের ২০০ ট্যানারি মালিক একই স্বপ্ন দেখছেন’।
‘হাজারীবাগের অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে গেছেন। এসব শিল্পে তাদেরও কর্মসংস্থান হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর