এ ধোয়ায় ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি উৎপাদন ও জনস্বাস্থ্য এবং চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তাঘাট। নষ্ট-দূষিত হচ্ছে আবাসিক অঞ্চল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশও।
সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার আনাচে-কানাচে সরকারি নীতিমালা ও আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করে যাচ্ছে বৈধ-অবৈধ অসংখ্য ইটভাটা। প্রতিটি ইটভাটা ৫ থেকে ৮ একর ফসলি জমি নষ্টের পাশাপাশি চারপাশের কৃষি উৎপাদন ব্যহত করছে। ফলে প্রতি বছর কমে যাচ্ছে শত শত একর দোফসলি উর্বর কৃষিজমি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় কৃষকদের লোভ বা ভয় দেখিয়ে জমি লিজ নিয়ে ইটভাটাগুলো স্থাপন করছেন প্রভাবশালীরা। সরকারি ৮টি বিভাগের ছাড়পত্র নিয়ে ভাটা প্রতিষ্ঠার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনুমোদন ছাড়াই ইট পোড়ানো শুরু করে দিয়েছে অনেকগুলো।
পরিবেশ অধিদফতর, বগুড়া অঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলায় ইটভাটা রয়েছে ১০৮টি। এর মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র পেয়েছে ৪২টি, বাকি ৬৬টির কোনো ছাড়পত্র নেই। পরিবেশবান্ধব জিগজ্যাগ চিমনি রয়েছে ৭৬টি ভাটার, ১২০ ফিট চিমনিতেই চলছে বাকি ৩২টি।
অধিদফতরের পরিচালক মো. আশরাফুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘অনুমোদনবিহীন ৬৬টি ভাটা বন্ধে নোটিশ দেওয়া হলে তারা হাইকোর্টে রিট করে তিনমাসের জন্য ইট পোড়ানোর অনুমোদন পেয়েছেন। এরপরও আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ছাড়পত্রবিহীন ইটভাটাগুলোতে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে’।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখার সূত্রমতে, ৯৭টি ভাটাকে ইট পোড়ানোর লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ইটভাটার প্রথম নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হচ্ছে পরিবেশ অধিদফতর। আমরা পরিবেশ ছাড়পত্রসহ সকল কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর ইট পোড়ানোর লাইসেন্স দেই। তবে কোনোভাবে যখন প্রমাণিত হয়, ভাটায় পরিবেশ দূষিত বা ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, আমরা সেটি বন্ধ করে দেই’।
ইটভাটায় ক্ষতিগ্রস্ত রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী ইউনিয়নের দেউলমুড়া গ্রামের ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের মালিক মনসব আলী বলেন, ‘সাড়ে তিন লাখ ট্যাহা খরচ কইরা সেচ মেশিন বসাইচি। ২৫ বিঘা জমিতে সেচ দিব্যার পাইরলে তবেই খরচ উঠবো। কিন্তু প্রজেক্টের মধ্যখানে ভাটা বসাইয়া কৃষকগোরে জমি নিয়্যা নিলো। এহন নিজের তিন/চার বিঘাসহ মোট ১০ বিঘা জমি পইড়লো আমার প্রজেক্টের মধ্যে। এত ট্যাহা দিয়্যা সেচ মেশিন বসাইয়া ১০ বিঘা জমিতে সেচ দিলে আমার অর্ধেক খরচও উইঠবো না’।
একই এলাকার কৃষক লাল চাঁন মিয়া বলেন, ‘পয়লা আমি জমি দিব্যার চাই নাই। কিন্তু লোভে পইড়্যা সবাই জমি দিয়্যা দিচে। আমার মাঝখানের জমি না দিয়্যা আর উপায় আছিল না। ওই একখণ্ড জমি আছিল আমার চাষাবাদের সম্বল’।
দেউলমুড়ার সাহেব আলী, ভট্টমাঝিড়া এলাকার আব্দুস সামাদ সরকার, গোজা এলাকার তসলিম আলম ও আব্দুল অলী আকন্দসহ আরও অনেকের অভিযোগ, এলাকার প্রভাবশালীরা ব্যক্তিরা লোভ বা ভয় দেখিয়ে জমি নিয়ে সেখানেই ইটভাটা গড়ে তুলছেন।
সলঙ্গার বড়গোজা এলাকার বন্ধু ব্রিকসের মালিক নজরুল ইসলামের দাবি, সকল বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষেই ইটভাটা চালাচ্ছেন তিনি। নিজের ৫০ শতক ও আশপাশের ২৫ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে এ ইটভাটা চালু করেছেন।
কাজিপুরের গান্ধাইল এলাকার থ্রি স্টার ইটভাটার মালিক সুকুমার চন্দ্র জানান, তার ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হলেও পরিবেশ ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লিটন জানান, একটি ইটভাটা চালাতে কমপক্ষে ৮টি সরকারি দফতরের অনুমোদন লাগে। সেগুলো হচ্ছে- স্থানীয় চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতর, সিভিল সার্জন কার্যালয়, কৃষি অধিদফতর, এলজিইডি, বিএসটিআই, আয়কর অফিস ও জেলা প্রশাসন। কিন্তু সিরাজগঞ্জের অধিকাংশ ভাটারই বেশিরভাগ অধিদফতরের অনুমোদন নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এএসআর