ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেনাপোল স্থলবন্দরকে বঙ্গবন্ধু বন্দর নামকরণের প্রস্তাব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
বেনাপোল স্থলবন্দরকে বঙ্গবন্ধু বন্দর নামকরণের প্রস্তাব উপদেষ্টা কমিটির সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। ছবি: বাংলানিউজ

বেনাপোল (যশোর): নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ‘বেনাপোল স্থলবন্দরকে বঙ্গবন্ধু স্থলবন্দর নামকরণের প্রস্তাবে আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) সঙ্গে আমিও একমত। এর জন্য কিছু নিয়ম আছে। বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট থেকে এর অনুমতি নিতে হবে। দ্রুত যেন প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হয়, সেজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবো’।

শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বেনাপোল স্থলবন্দর প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল অডিটোরিয়ামে স্থলবন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালনায় গতিশীলতা আনতে গঠিত উপদেষ্টা কমিটির ৮ম সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এসব কথা বলেন তিনি।

নৌ-মন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের সব বন্দরগুলোতে অবকাঠামোর যে উন্নয়ন হয়েছে, বিগত কোনো সরকার তা করেনি।

বিএনপি সরকারের আমলে বন্দর বন্ধ হয়েছে আর আওয়ামী লীগ সরকার ওই সব বন্ধ বন্দর চালু করে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। চাঙ্গা করেছে দেশের অর্থনীতিকেও। আগে বন্দরগুলো শুধু লোকসান গুণতো। আর এখন আগের লোকসান পুষিয়ে লাভের মুখ দেখছে।

শাজাহান খান বলেন, বেনাপোল বন্দরের মালামাল ওঠা-নামার জন্য বিদেশ থেকে ক্রেন আমদানি করা হবে। যানজট নিরসনে পুলিশ বাহিনীকে রাস্তায় কাজ করে যানজটমুক্ত রাখতে হবে। পণ্যজট কমাতে কাস্টমসের নিলামের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

পাসপোর্ট যাত্রীদের সুবিধার্থে চেকপোস্ট এলাকায় দু’টি ব্যাংক বুথ ও বন্দরকে অটোমেশন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।

এর আগে বিকেলে মন্ত্রী বেনাপোল বন্দরের ১নং গেটের অভ্যন্তরে পণ্যাগার ও দিঘিরপাড় এলাকায় ট্রাক টার্মিনালের উদ্বোধন করেন।

সভায় বন্দরের বর্তমান অবকাঠামো উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জনপ্রতিনিধিসহ সকল পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতারা। উন্নয়নের দাবি জানান সরকারি কর্মকর্তারাও।

বন্দর উপদেষ্টা কমিটির সদস্য স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, ‘এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়নের ক্ষেত্রে আজও এ বন্দর অবহেলিত। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের তেমন নজরদারি নেই’।

‘এ পথে ভারতে যাতায়াতে পেট্রাপোল কাস্টমসে যাত্রীদের দুর্ভোগেরও সীমা নেই। যাত্রী নিয়ন্ত্রণে তারা বাঁশ দিয়ে খাটালের মতো তৈরি করে, যেখানে ইচ্ছে দীর্ঘক্ষণ যাত্রীদের অযথা লাইনে আটকে রেখে হয়রানি করছে’।

রাষ্ট্রীয়ভাবে বিষয়টিতে নজর দিতে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এমপি।

পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, ‘বিশ্বের কাছে বেনাপোল বন্দর একনামে পরিচিতি। কিন্তু এখানকার ব্যবস্থাপনা খুব লজ্জাদায়ক। ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসা সেবায় এ পথে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করছেন। বেড়ানো ও সরকারি কাজেও উচ্চ পর্যায়ের মানুষ যাতায়াত করছেন’।

‘তারা যখন বাংলাদেশে প্রবেশ করেন, তখন একজন পুলিশ কনস্টেবল হাত থেকে পাসপোর্ট নিয়ে কথা বলেন। তার কাছ থেকে কতোটুকু আশা করা যায়? এখানে কমপক্ষে পুলিশের একজন ইন্সপেক্টরকে দায়িত্ব দিতে হবে। উন্নয়নের সবক্ষেত্রে  বিশ্ব এগিয়ে চলেছে। আমাদের পিছিয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই’।

সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর স্থলপথে আমদানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি রাজস্বদাতা হলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে। বন্দরের ধারণ ক্ষমতা ৩০ হাজার মেট্রিকটন হলেও এখানে সার্বক্ষণিকভাবে আমদানি পণ্য থাকে দেড় থেকে দুই লাখ মেট্রিকটন। স্থান সংকটে পণ্য খালাস করতে না পেরে প্রতিনিয়ত লোকসান গুণতে হয় ব্যবসায়ীদের’।

‘প্রায়ই পণ্য চুরি ও নিরাপত্তাকর্মী হত্যার মতো ঘটনা ঘটলেও আজ পর্যন্ত বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপিত হয়নি। কাস্টমসে ব্যাঙ্ক ক্লিয়ারিং হাউজ স্থাপনের কথা থাকলেও হয়নি। নির্মিত হয়নি প্রতিশ্রুত হাসপাতালও। এসব অব্যবস্থাপনায় ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন’।

সরকার যদি বেনাপোল বন্দরের উন্নয়ন করে, তবে বর্তমানে যে রাজস্ব আসছে, তার দ্বিগুণ আহরিত হবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।

সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আলী কদর সাগর বলেন, বন্দর কেবল রাজস্ব নিচ্ছে। কিন্তু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের যা প্রয়োজন, তারা তা পাচ্ছেন না। রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় একেবারে অচলাবস্থা নেমে এসেছে।

বিজিবি’র দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিওনের  বিগ্রেডিয়ার জেনারেল তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ওপারে যাত্রী ভোগান্তির কারণে এপারে এক দেড় কিলোমিটার লাইন পড়ে যায়। তারা প্রশাসনিকভাবে এ নিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়েছেন। বেনাপোল বন্দর এলাকা দিয়ে চোরাচালান প্রতিরোধে স্ক্যানিং মেশিন স্থাপনের বিষয়েও অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টমস্‌ নীতি) লুৎফর রহমান বলেন, ‘এর আগে আমি বেনাপোল কাস্টমসে সহকারী কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। তখন থেকে ব্যবসায়ীদের উন্নয়নের দাবি শুনে আসছি। উন্নয়ন হচ্ছে, তবে বাণিজ্য সম্প্রসারণে আরো প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই’।  

বাণিজ্য সম্প্রসারণে উন্নয়নের পক্ষে আরো বক্তব্য দেন নৌ-পরিবহন  মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সাফায়েত হোসেন, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব হাবিবুর রহমান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন,  কাস্টমস্‌ কমিশনার বেলাল হোসাইন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মণ্ডল, ৪৯ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল হক, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির চিফ ইঞ্জিনিয়ার মান্নান হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন, আনসারের যশোর জেলা কমান্ডার মোকছেদ হাসেন, বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক লতা প্রমুখ।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, বেনাপোল বন্দরের উন্নয়নে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ করতে প্রায় দুই বছর লেগে যাবে। কাজ শেষ হলে বেনাপোল মডেল বন্দর হিসেবে পরিচিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
এজেডএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।