ঢাকা, শনিবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

মোংলায় প্রথম আসছে ‘মোবাইল হারবার ক্রেন’

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৮
মোংলায় প্রথম আসছে ‘মোবাইল হারবার ক্রেন’ মোবাইল হারবার ক্রেন

ঢাকা: মোংলা বন্দরে কন্টেইনারবাহী জাহাজ হ্যান্ডেলিং বাড়াতে ‘মোবাইল হারবার ক্রেন’ আনছে সরকার। এর মাধ্যমে মোংলা বন্দরের জেটিতে গিয়ারলেস বা ক্রেনবিহীন জাহাজ থেকে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা বেড়ে যাবে। হ্যান্ডেল করা যাবে বছরে অন্তত অতিরিক্ত ৩৬টির বেশি কন্টেইনারবাহী জাহাজ।

দেশের দ্বিতীয় প্রধান সমুদ্র বন্দর মোংলায় মোট পাঁচটি জেটি রয়েছে। তবে কোনো ডেডিকেটেড কন্টেইনার টার্মিনালেই মোবাইল হারবার ক্রেন না থাকায় জাহাজের নিজস্ব সক্ষমতার মাধ্যমে সীমিত পরিসরে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করতে হয়।

এই সীমা বাড়াতেই অত্যাধুনিক এ ক্রেন আনার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।  

হুকের সাহায্যে মোবাইল হারবার ক্রেন বাকেট ধরে পণ্য লোড-আনলোড করতে পারে। পণ্য গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য বিশাল বিয়ারিংয়ের চাকার মাধ্যমে চলাচল করতে পারে এটি। সেজন্য নির্দিষ্ট একটা কক্ষপথ থাকবে। ক্রেনের গঠন দেখতে অনেকটা সিলিন্ডারের মতো। চালকের নিয়ন্ত্রণে এই ক্রেন ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরতে পারে। এটি কিনতে সরকারকে গুণতে হবে ৩৫ কোটি টাকা।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মোবাইল হারবার ক্রেন কেনার জন্য এরইমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। অত্যাধুনিক এ ক্রেন আনার পাশাপাশি বন্দর এলাকায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন করা হবে। মোংলা বন্দরের এসব উন্নয়নে চলতি জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন মেয়াদের একটি প্রকল্পে ৩৫ কোটি টাকা খরচ হবে সরকারের। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক ও তড়িৎ) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শাহ্ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মোংলা বন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বন্দর হওয়া সত্ত্বেও এখানে এখনও কোনো মোবাইল হারবার ক্রেন নেই। যে কারণে গিয়ারলেস জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা সম্ভব হয় না। কারণ গিয়ারলেস জাহাজে ক্রেন থাকে না। কিন্তু অন্যান্য জাহাজে ক্রেন থাকে। কারণ ক্রেনের ওজন অনেক বেশি। মোবাইল হারবার ক্রেন সংগ্রহের মাধ্যমে কন্টেইনার খালাসও বাড়বে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্বের আধুনিক বন্দরগুলোতে সাধারণত শোর টু শিপ (সৈকত থেকে জাহাজ) ক্রেনের মাধ্যমে হ্যান্ডেল করা হয়। কিন্তু মোংলায় এই পদ্ধতির অভাবে কন্টেইনার খালাসে গতি নেই। পুরাতন পদ্ধতির মাধ্যমে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের ফলে এখানে উৎপাদনশীলতাও খুব কম থাকে। জাহাজ থেকে পণ্য খালাসেও কালক্ষেপণ হয়ে থাকে। মোবাইল হারবার ক্রেন সব কালক্ষেপণ দূর করে নিয়ে আসবে গতি।

একটি সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দরে খালাস হওয়া জাহাজের সংখ্যা ছিল ৪১৬টি, আর কার্গো হ্যান্ডেলিং হয় ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ২৭৯ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ আসে ৬২৩টি, আর কার্গো হ্যান্ডেলিং হয় ৭৫ লাখ ১৩ হাজার ৭২৭ টন। বন্দরটিতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যেখানে ২৬ হাজার ৯৫২টি কন্টেইনারে পণ্য আমদানি করা হয়, সেখানে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই পণ্য আমদানি হওয়া কন্টেইনারের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। অর্থাৎ বছর বছর বেড়েই চলেছে জাহাজ খালাস আর পণ্য আমদানির কন্টেইনারের সংখ্যা।

এসব চাহিদার কথা চিন্তা করেই সুন্দরবন ঘেঁষে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের জন্য প্রথমবারের মতো কেনা হচ্ছে মোবাইল হারবার ক্রেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।