ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সেশনভিত্তিক ইউএসএসডি চার্জ নির্ধারণে বৈঠক সোমবার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৮
সেশনভিত্তিক ইউএসএসডি চার্জ নির্ধারণে বৈঠক সোমবার

ঢাকা: মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মোবাইল ফোন অপারেটরদের ইউএসএসডি (আনস্ট্রাকচার্ড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস ডাটা) চ্যানেল ব্যবহারের সেশনভিত্তির মূল্য নির্ধারণ করতে সোমবার (১৬ এপ্রিল) বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

এক সেশন ৯০ সেকেন্ড হিসেবে প্রতি স্টেশনের মূল্য ৮৫ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে বিটিআরসি। অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহক স্বার্থের বিবেচনায় সেশন প্রতি চার্জ ২০ পয়সার বেশি না রাখার জন্য বলেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে সেশনভিত্তিক চার্জ ধার্য হলে গ্রাহকের খরচ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
 
রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের পরিবর্তে ইউএসএসডি-এর ট্যারিফ সেশনভিত্তিক হলে বেশ কিছু সেবা যা এখন ফ্রি দেওয়া  হচ্ছে, সেগুলোর উপর চার্জ বসানো হবে বলে আশঙ্কা করছেন মোবাইল ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, (ক্যাশ ইন, কেনাকাটার পেমেন্ট, মোবাইল এয়ারটাইম রিচার্জ, রেমিট্যান্স গ্রহণ, ব্যালেন্স চেক করা, ইত্যাদি)। বর্তমানে কেবল, ক্যাশ আউটে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ চার্জ করা হয়। ইউএসএসডি-এর ট্যারিফ সেশনভিত্তিক হলেই এই বহুল ব্যবহৃত সেবাগুলো আর ফ্রি থাকবে না এবং ছোট-বড় সমস্ত সেবার জন্যই একই সার্ভিস চার্জ দিতে হবে।

এতে গ্রাহকদের এতদিন দিয়ে আসা বিনা‍মূল্যের সুবিধাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কেননা সেশনভিত্তিক লেনদেন হলে মোবাইল অপারেটররা সফল ও বিফলসহ সব ধরনের লেনদেনের উপর চার্জ করবে, ফলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার খরচ বেড়ে যাবে এবং তার প্রভাব গ্রাহকদের ওপর পড়বে।
 
এছাড়া পাঁচ লাখেরও বেশি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। কেননা মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রবৃদ্ধি এবং উন্নত সেবা বজায় রাখতে এই বাড়তি খরচের ধাক্কা নানাভাবে গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এজেন্টদের কমিশন কমিয়ে দেবে।
 
বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আয়ের ৭ ভাগ মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে তাদের ইউএসএসডি চ্যানেল ব্যবহার করে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য, যা রেভিনিউ শেয়ারিং মডেল নামে পরিচিত। এছাড়া আয়ের ৭৭ ভাগই পায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী এজেন্ট ও পরিবেশকরা। আর সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি পায় ১৬ ভাগ। এই আয় থেকেই মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের যাবতীয় খরচ নির্বাহ করে থাকে।
 
মোবাইলফোন অপারেটররা বর্তমানে রেভিনিও শেয়ারিং মডেলের আওতায় যে ৭ ভাগ টাকা পায়, তারা সেই পরিমাণকে আরও বাড়িয়ে নিতে এই সেশনভিত্তিক চার্জের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে বলে জানা গেছে।
 
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন মোবাইল ব্যাংকিং চালু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল আর্থিক সেবা বহির্ভূত বিশাল জনগোষ্ঠীকে অল্প খরচে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আর্থিক সেবা প্রদান করা। তবে সেশন ভিত্তিক চার্জ সহনীয় মাত্রায় না হলে এই প্রক্রিয়ায় গ্রাহক টাকা পাঠাতে চাইলে তাদের খরচ এখনকার চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে। এতে লাখ লাখ মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক যাদের বেশীরভাগই নিম্ন-আয়ের তারা এই সেবা ব্যবহার করতে আগ্রহ হারাবে। ফলে বাধাগ্রস্ত হবে সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি  কর্মসূচি। এর প্রভাব আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়তে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
 
২০১১ সালে চালু হওয়া মোবাইল ব্যাংকিং চালু হওয়ার উদ্দেশ্য ছিল দেশের দরিদ্র ও ব্যাংক বহির্ভূত জনগোষ্ঠীকে একটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় নিয়ে আসা। ইউএসএসডি চ্যানেল ব্যবহারের ফলে কম দামের মোবাইল সেট ব্যবহার করে গ্রাহকরা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা উপভোগ করতে পারছে। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং-এর সাফল্য দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংক ২৮টি ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমোদন দিলেও বর্তমানে ১৮টি ব্যাংক এই সেবা প্রদান করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিস্তৃত সেবা প্রদান করছে বিকাশ এবং ডাচ বাংলা ব্যাংকের রকেট। বর্তমানে ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট ছাড়াও কর্মীদের বেতন, মোবাইল ফোনের এয়ার টাইম রিচার্জ, দোকানে কেনাকাটার মূল্য পরিশোধ, বিদেশ থেকে রেমিটেন্স গ্রহণসহ অনেক কিছুই সম্পন্ন হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং -এর মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আগস্ট মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে নিবন্ধিত মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহকের সংখ্যা ৫ কোটি ৬৯ লাখ।

এ বিষয়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী বিকাশ’র হেড অব কর্পোরেট কমিশন শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, আমরা আশা করব ইউএসএসডি মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্বল্প আয়ের মানুষের স্বার্থকেও গুরুত্ব দেবে। যাতে নিম্ন আয়ের গ্রাহকদের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে এবং সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম ব্যাহত না হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৮
এসই/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।