ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অটোমেশন ও সিসি ক্যামেরার আওতায় যাচ্ছে বেনাপোল বন্দর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৫ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৮
অটোমেশন ও সিসি ক্যামেরার আওতায় যাচ্ছে বেনাপোল বন্দর বেনাপোল বন্দর। ছবি: বাংলানিউজ

বেনাপোল (যশোর): দেরিতে হলেও এবার দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরকে অটোমেশন ও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে উধ্বর্তন কর্মকর্তারা এসব বাস্তবায়নে বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মহল ও বন্দর কর্মকর্তারা মনে করছেন আধুনিক এসব স্থাপনা চালু হলে বন্দরে আমদানিপণ্যের নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা ও দ্রুত বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।  

বৃহস্পতিবার (৭ জুন) সকালে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম এ তথ্য জানান।


বেনাপোল বন্দর
এসময় তিনি আরো বলেন, বেনাপোল বন্দরের আধুনিকায়নের জন্য এরই মধ্যে ৮৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্দরের পণ্যাগার ও ওপেন ইয়ার্ডের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। আমদানি পণ্য রক্ষণাবেক্ষণে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণের প্রস্ততি চলছে। বাইপাস সড়কের বিষয়টিও জানানো হয়েছে। সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ড এড়াতে বন্দরে ফায়ার স্টেশনের আধুনিকায়ন ও এর জনবল বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য পর্যবেক্ষণ ও দ্রুত কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পুরো বন্দর এলাকাকে অটোমেশন পদ্ধতি ও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। খুব দ্রুত এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। তখন এপথে বাণিজ্য আরো বাড়বে। পাশাপাশি বেনাপোল বন্দর একটি মডেল মন্দর হিসেবে পরিচিতি পাবে।  

তিনি আরো বলেন, ভারতের পেট্রাপোল চেকপোস্টে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে অনেক দিন ধরে নানান অভিযোগ উঠে আসছিল। হয়রানি বন্ধে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করার পর ফলপ্রসূ কিছু সমাধান এসেছে। তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে  ৫শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তারা হাতে নিয়েছেন। এসব উন্নয়নকাজের মধ্যে রয়েছে ইমিগ্রেশনে যাত্রী ছাউনি,প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে যাত্রীদের আর কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।  

বন্দরসূত্রে জানা যায়, বেনাপোল বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। দেশের ১৮টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১২টি বন্দরের একটি এই বেনাপোল বন্দর। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বন্দর থেকে ভারতের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক শহর ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৩ কিলোমিটার। মাত্র ৩ ঘন্টায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দর থেকে পৌঁছাতে পারে কলকাতায়। তেমনি একই সময় কলকাতা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছায় বেনাপোল বন্দরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এপথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। প্রতিবছর এপথে ভারত থেকে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। এ থেকে সরকার বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে।
বেনাপোল বন্দর
কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এ বন্দরের গুরুত্ব এতো বেশি হলেও শুরু থেকেই বন্দরের অবকাঠামোগত অবস্থা খুবই নাজুক এবং একইসঙ্গে শোচনীয়। বলতে গেলে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়াই লাগেনি এই বন্দরে। এছাড়া বন্দরের নানা অব্যবস্থাপনায় বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে চরম ক্ষতির শিকার হয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা একে একে এবন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছেন অন্য বন্দরে। একারণে কয়েক বছর ধরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে কর্তৃপক্ষকে পড়তে হচ্ছে বেকায়দায়।  

বর্তমানে বন্দরে আমদানিপণ্য রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য ৩৪টি পণ্যাগার রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ওপেন ইয়ার্ড ও ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল। তবে এসবই প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল। সব সময়ই ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় ৪ গুণ বেশি পণ্য থাকে বন্দরে অনেকটাই অরক্ষিত অবস্থায়। এতে নানা সময় ঘটে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত বিপত্তি।

আমদানিপণ্য খালাস কার্যক্রমে বন্দর ও কাস্টমসের কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে প্রায় ৬ শতাধিক। বন্দর থেকে আমদানিপণ্য ছাড় করানোর কাজ করছে ৭৫০টি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধি। এছাড়া রয়েছে সম সংখ্যক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি। আরো রয়েছে ব্যাংক, বিমাসহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। বন্দরে পণ্য খালাসের কাজের জন্য আছে প্রায় দুই হাজার হ্যান্ডলিংক শ্রমিক। সব মিলিয়ে এই বন্দরে প্রায় ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। সেইসঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাখো  মানুষের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা হচ্ছে।  

বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ১১ লাখ ২৪ হাজার ১২৬ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এসময় ভারতে রফতানি করা হয়েছে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৬১ মেট্রিক টন পণ্য। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আমদানি ১২ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন, রফতানি ৩ লাখ ২৭৪ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমদানি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন, রফতানি করা হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন পণ্য। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছে ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৮ মেট্রিক টন, রফতানি হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭৩৯ মেট্রিক টন পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছে ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ মেট্রিক টন পণ্য। এসময়ে রফতানি হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন।  

সব মিলিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ৫ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছে ৬৪ লাখ ৩৭ হাজার৯৯৩ মেট্রিক টন পণ্য। আর রফতানি করা হয়েছে ১৯ লাখ ৫৯ হাজার ৯৮৭ মেট্রিক টন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৮
এজেডএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।