ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজেট সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে সহায়ক নয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৮
বাজেট সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে সহায়ক নয় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

ঢাকা: বাজেট প্রতিটি সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল। যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সবাইকে প্রভাবিত করে। কিন্তু ২০১৮-১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেট সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সহায়ক নয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজ।

সোমবার (২৫ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত বাজেট ২০১৮-১৯: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তারা।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত বছরের বাজেট কিন্তু রিভাইস ও সংশোধন করা হয়েছে।

এডিপি সংশোধন করা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে এতো বড় বাজেট এবারও যে বাস্তবায়িত হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যেহেতু এটা নির্বাচনের বছর তাই সাধারণ মানুষ বুঝবে না, কি রিভাইস ও ইমপ্লিমেন্ট হয়েছে। এতে মানুষকে খুশি করার জন্য কর তেমন বেশি আরোপ করা হয়নি। অতএব সরকারের একটা বিরাট ভাবমূর্তি দাঁড়ালো যে তারা বিরাট বাজেট দিয়েছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য ও অন্যান্য কর্মসংস্থানের জন্য বাজেটে বিশেষ বার্তা থাকবে বলে ভাবা হয়েছিলো। কিন্তু এ বিষয়ে বাজেটে কিছুই বলা নেই। এমনকি বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারেও কিছু বলা নেই।  

তিনি আরও বলেন, শিক্ষাখাতে বাজেট সেই ১২ শতাংশই রয়ে গেছে। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। যেটা করা হয়েছে তাতে শিক্ষকের বেতন-ভাতাতেই সব চলে যাবে। স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের বিষয়টি আরও দুঃখজনক। মনে হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতে সাধারণ মানুষের প্রচুর সুযোগ সুবিধা চলে এসেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু হয়তো আছে তাতে দরিদ্র মানুষরা উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু আজকাল দরিদ্র মানুষরা তো শুধুমাত্র ডায়রিয়া ও পেটের অসুখে ভোগেন না। তাদেরও ব্যয়বহুল রোগ হচ্ছে। হাসপাতাল ভবন হলেও স্বাস্থ্য উপকরণ, যন্ত্রপাতি, রোগীদের পথ্য  এগুলাতে বাজেটে আরো বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল। কেননা স্বাস্থ্যসেবা প্রাইভেট সেক্টরের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে তেমন নজর না দিয়ে মেগা প্রকল্পের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেগা প্রজেক্টগুলো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। কিন্তু বর্তমান সমস্যা ভুল না করে মেগা প্রজেক্টে হাত দিলে তা কোনোভাবেই জনকল্যাণমুখী বাজেটের অন্তর্ভুক্ত বলা যায় না। বলা হচ্ছে এনবিআর'কে শক্তিশালী করা হয়েছে। কিন্তু তা হয়েছে শুধুমাত্র এনবিআরের লোকবল বাড়ানোর প্রক্রিয়া। তারাতো গতবারের টার্গেট পূরণ করতে পারেনি। তাহলে এবার কি অবস্থা হবে? এছাড়া বেসরকারি অনেক বড় একটি আয়ের খাত হিসেবে ব্যাংকিং সেক্টর ও সঞ্চয়পত্রকে দেখানো হয়েছে। এমনিতেই ব্যাংকিং সেক্টর চাপের মুখে, তার উপর আবার এই চাপে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের উপর চাপ পড়বে। যার কারণে আমানত কমে যাচ্ছে ও সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে।  

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা কুপতলা করে তুষ্ট করতে সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। যে কারণে রাস্তা ঠিক রেখে যানজট নিরসন করার মতো কাজটিও সম্পন্ন হয় না। আর আমরাও প্রতিবাদ করি না। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কোনো সমন্বয় নেই, তাও আমরা মেনে নিচ্ছি। আর সরকার এই সুযোগেই বলছে দেশ উন্নত হয়েছে।  

কলামিস্ট আলী ইমাম মজুমদার বলেন, গত ১১ মাসে ৬৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। আর এক মাসে বাকিটা বাস্তবায়ন করা কি সম্ভব? অর্থাৎ বাস্তবায়নের হার খুবই নিম্ন। যে কারণে আমরা তুলনামূলকভাবে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছি। কেননা ধনী ও গরিবের দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে। আমাদের কৃষিখাতে ভর্তুকি বাড়ানো দরকার ছিল।  

সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬  ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৮
এমএএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।