ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

৩৫০ কোটির গলার কাঁটা! আবারও ভাঙতে হবে দোকান

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৮
৩৫০ কোটির গলার কাঁটা! আবারও ভাঙতে হবে দোকান মহাখালী কাঁচাবাজার। ছবি বাংলানিউজ

ঢাকা: ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে মহাখালী, যাত্রাবাড়ী ও আমিনবাজারে তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ করেছে সরকার। সব কাজ শতভাগ শেষ। অথচ এই তিনটি স্থানে কোনো ব্যবসায়ী যেতে চাচ্ছেন না। 

মোট সাড়ে চার হাজার দোকান রয়েছে বিশাল তিনটি মার্কেটে। অথচ এর মধ্যে মাত্র ১৯২টি দোকান বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে।

বাকি দোকানগুলো পড়ে আছে ফাঁকা। দোকানের জায়গা ছোট হওয়ায় ব্যবসায়ীরা যেতে চাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। ফলে মার্কেটের ভবন ঠিক রেখে দোকানগুলো আবারও ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

এছাড়া নতুন স্থানে ক্রেতা না পাওয়া, পুরনো ক্রেতা হারিয়ে ফেলা, নবনির্মিত কাঁচাবাজার ব্যবসাবান্ধব না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে সরতে চান না ব্যবসায়ীরা।
 
সরেজমিন দেখা গেছে, কাঁচাবাজারগুলো নতুন ব্যবসায়ীদের বরণ করতে প্রস্তুত। মহাখালী বাস টার্মিনালের কাছেই নির্মিত হয়েছে ডিএনসিসি মার্কেট। মনোরম পরিবেশ। প্রায় দুই বছর ধরে অলস পড়ে আছে মার্কেটটি। চালু হওয়ার আগেই আবার ভাঙতে হবে দোকানগুলো। কারণ এই মার্কেটের দোকানগুলো মাত্র ৭০ বর্গফুট থেকে সর্বোচ্চ ১২০ বর্গফুটের মধ্যে। দোকানের পরিসর ছোট হওয়ায় নতুন ব্যবসায়ীরা এখানে আসছেন না। ফলে ছোট দোকানগুলো ভেঙে বড় করা হবে। ‘ঢাকা শহরে তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় এই তিন মার্কেটের দোকানগুলো ভেঙে পুনরায় নির্মাণ করা হবে। তাতে অপচয় হবে সরকারি অর্থের।
 
প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মাদ আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দোকানগুলো ছোট হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সেখানে যেতে চাচ্ছেন না। এগুলো বড় করে ব্যবসায়ী বান্ধব করতে হবে। সেজন্য আবার দোকানগুলো ভেঙে স্পেস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
  
কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখানের ব্যবসায়ীরা প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বর্গফুট জায়গায় ব্যবসা করেন।  

অন্যদিকে, দীর্ঘকালের ব্যবসায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে চান না ব্যবসায়ীরা।
 
কারওয়ানবাজারের চালের আড়তদার লক্ষ্মীপুর ট্রেডার্সের মালিক সাইফুর হক বলেন,  ৩৫ বছর ধরে কারওয়ানবাজারে চাল বিক্রি করি। পরিচিত ক্রেতারা এখানে নিয়মিত আসেন। যাত্রাবাড়ী গেলে ক্রেতা পাবো কোথা থেকে? আমার বাপে এখানে ব্যবসা করছেন, আমিও করি। আল্লাহ যতোদিন বাঁচায় রাখবেন, আমরা এখানেই থাকবো, অন্য কোথাও যাবো না।
 
কারওয়ানবাজারে এক হাজার দোকান রয়েছে, যেগুলোর স্পেস ৩০০ থেকে ৪০০ বর্গফুট করে। ছোট দোকানে তারা কিছুতেই যেতে চান না। ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
 
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, তিনটি কাঁচাবাজারে ব্যবসায়ীরা যেতে চান না। এর প্রধান কারণ এই তিন বাজারের দোকানগুলো ছোট। সেজন্য দোকানগুলো পুনর্বিন্যাস করে স্পেস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একজন ব্যবসায়ীকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী দোকান বরাদ্দ দেবো। যেভাবেই হোক এই তিনটি মার্কেটে ব্যবসায়ীদের আনতে হবে, তা না হলে আমরা রাজস্ব হারাবো।
 
তিনি আরও বলেন, এখনও দোকানের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। দোকান বরাদ্দ কমিটি ভাড়া নির্ধারণ করবে। তার আগে এগুলোর স্পেস বাড়াতে হবে।
  
প্রায় ১২ বছর আগে রাজধানীর তিন প্রান্ত মহাখালী, যাত্রাবাড়ী ও আমিনবাজারে  পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ করে কারওয়ানবাজারের সব দোকান সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।  সে অনুযায়ী মোট ৩৫০ কোটি টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি মার্কেট। এখন এই তিন ভবনের দোকানগুলো ভেঙে পুনরায় তৈরি করতে আবারও বাড়বে ব্যয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৮
এমআইএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।