ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সাভারের পরিণতি কি হাজারীবাগের মতো!

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৮
সাভারের পরিণতি কি হাজারীবাগের মতো! সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে ট্যানারি শিল্প। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: হাজারীবাগ ও বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে ট্যানারি শিল্প। লক্ষ্য, পরিকল্পিত শিল্পনগরী গড়ে তোলা। কিন্তু, সঠিক পরিকল্পনা আর সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে সরকারের সেই প্রকল্প বুমেরাং হতে যাচ্ছে।

পরিবেশবিদ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়ার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এখনই উদ্যোগী না হলে হাজারীবাগের মতোই পরিণতি হবে সাভারের। দূষণ না কমে বরং নতুন নতুন অঞ্চল দূষিত হবে।



বুধবার (১৮ জুলাই) সাভার ট্যানারি শিল্প এলাকা ঘুরে এমনটাই মনে হয়েছে। পুরো প্রকল্প এলাকায় ১১৪টি ট্যানারি শিল্প কারখানা তাদের কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০ টন কঠিন বর্জ্য (যেমন-পশুর চামড়ার উচ্ছিষ্ট অংশ, কান, খুড়, মাথার অংশ বিশেষসহ বিভিন্ন বর্জ্য) বের হচ্ছে।

প্রকল্পের শুরু থেকেই পরিবেশবিদ ও ট্যানারি মালিকরা দাবি করে আসছিলেন, শুধু তরল বর্জ্য পরিশোধন করার ব্যবস্থা করে সেখানে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর করা হলে উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। বাস্তবে হচ্ছেও তাই। সবেমাত্র ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সাভার ট্যানারির চারটি মডিউল চালু করে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। সাভারের ট্যানারি শিল্প নগরী।  ছবি: বাংলানিউজএরই মধ্যে সাভারের চামড়া শিল্পনগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) পাশের খোলা জায়গা (ডাম্পিং ইয়ার্ড) কঠিন বর্জ্যে ভরে গেছে। প্রায়ই উপচে পড়া বর্জ্য গিয়ে মিশছে পাশের ধলেশ্বরী নদীতে। ফলে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি।

অবশ্য প্রকল্প এলাকার অনেকেই বলছেন, যখন পুরো এলাকা কঠিন বর্জ্যে ভর্তি হয়ে যায়, তখন খোলা জায়গার বাঁধ ভেঙে দেওয়া হয়, তাতে ময়লা সরাসরিই চলে যায় নদীতে।

সবশেষ ঈদুল ফিতরের সময়ও কঠিন বর্জ্যের ওই ডাম্পিং ইয়ার্ড খুলে দেওয়া হয়। যা ঈদের পর আবার বস্তা দিয়ে আটকানো হয়েছে। এবার ‌ঈদুল আজহায় আরও কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।

সিইটিপি’র সাবেক প্রকল্প পরিচালক বর্তমানে প্রকল্প সমন্বয়ক মো. আব্দুল কাইয়ুম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখানে শুধু তরল বর্জ্য পরিশোধন করি। এর বাইরে কতো বর্জ্য আছে না? সেগুলো কী হবে? এখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে ফেলা হচ্ছে, যা কোনো সমাধান না। তাই সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে ডাম্পিং ইয়ার্ড বা এ বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা। তা না হলে হাজারীবাগের পরিণতিই হবে এখানে।

তিনি বলেন, কঠিন বা সলিড বর্জ্যের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। ওটা আমরা দেখিও না। আমরা শুধু তরল বর্জ্য নিয়ে কাজ করি। কাজেই ওখানে কী হবে, সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। এখনও তো ফিনিশিং গুড সেভাবে আসেনি। সেগুলো এলে কী পরিণতি হবে, পরিমাপ করা যায়?

সাভারের ট্যানারি শিল্প নগরী।  ছবি: বাংলানিউজসিইটিপি’র পাশেই ২০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা আছে যেখানে ডাম্পিং ইয়ার্ড ও শ্রমিকদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার কথা রয়েছে। তবে সেখানে এখনও কোনো কাজই শুরু হয়নি।

ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন মাহমুদ মাহিন বাংলানিউজকে বলেন, এখনই সলিড বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে ডিজাস্টার হয়ে যাবে। আমরা যেখানে বলছি, আধুনিক শিল্পনগরী সেখানে যদি গাড়ি ঢুকতে না পারে তাহলে তো আমাদের বিদেশি ক্রেতারা চলে যাবে। এ ব্যবসা টিকবে না। তাই যতদ্রুত সম্ভব সবকিছু ঠিক করে একটা ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা।

এনিয়ে পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, বুড়িগঙ্গাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষার নামে নতুন নতুন দূষণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এটি আসলে বুড়িগঙ্গা দূষণ কমবে না কেননা ধলেশ্বরী নদী থেকে পানি প্রবাহ এসে বুড়িগঙ্গাতেই পড়বে। সুতরাং দূষণের জায়গা আরও বিস্তৃত হবে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে হাজারিবাগের চেয়ে খারাপ পরিণতি হবে সাভারের।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা জেলার সভার উপজেলায় কান্দিবৈলারপুর ও চন্দ্রনারায়ণপুর মৌজা এবং কেরানীগঞ্জ উপজেলার চরনারায়ণপুর মৌজায় ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক চামড়া শিল্পনগরী। যেখানে রয়েছে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি)। মোট জমির ১৭ একর ব্যহৃত হয়েছে সিইটিপি নির্মাণে। প্রকল্প এলাকায় ২০৫টি প্লটের মাধ্যমে ১৫৫টি শিল্প ইউনিটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১১৪টি শিল্প ইউনিট তাদের চামড়া প্রক্রিয়াকরণের কাজ শুরু করেছে। অন্যরা অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে। তবে সব শিল্প ইউনিট আসবে কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৮
এসএম/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।