ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে সম্মত চীন-বাংলাদেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৮
বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে সম্মত চীন-বাংলাদেশ সংবাদ সম্মেলনে অতিথিরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: চীন ও বাংলাদেশের ভারসাম্যহীন বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে রাজি হয়েছে দুই দেশ। এ লক্ষ্যে চূড়ান্ত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য কাজ করছে দেশটি। একই সঙ্গে বিশ্ব-বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ঘোষণাপত্র মতে ৯৭ ভাগ রফতানি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পেতে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট (আপটা) থেকে বের হয়ে আসারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

রোববার (১২ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত জাং ঝুয়া এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
 
চীনা রাষ্ট্রদূত এ সময় জানান, চলতি বছরের নভেম্বরে চীনের সাংহাইয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘প্রথম আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা’।

বাংলাদেশ এ মেলার অন্যতম আমন্ত্রিত রাষ্ট্র। সেখানে বাংলাদেশি উৎপাদকদের জন্য আলাদা গ্যালারি তৈরি হবে। বাংলাদেশি বেশি বেশি রফতানি পণ্য চীনা আমদানিকারকদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ থাকবে। বাংলাদেশের উচিত সেই সুযোগ কাজে লাগানো।
 
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ডব্লিউটিও’র সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশ চীনের কাছে বিনিময়পত্র (লেটার অব এক্সচেঞ্জ) প্রেরণ করেছে। সম্মতি পাওয়া গেলেই বাংলাদেশ চীনের কাছে রফতানি পণ্যের ৯৭ ভাগে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাবে।

ডব্লিউটিও’র সদস্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে এ বাণিজ্য সুবিধা নিতে পারে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্টের আওতায় চীনের কাছ থেকে ৫ হাজার ৭৪টি রফতানি পণ্যের উপর শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছে। লেটার অব এক্সচেঞ্জ এর আওতায় বাণিজ্য সুবিধা গ্রহণ করলে আপটার আওতায় চলমান বাণিজ্য সুবিধা আর থাকবে না।
 
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার জন্য চীন আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখন এফটিএ'র সম্ভাব্যতা যাচাই প্রক্রিয়া চলছে। সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষর করবে। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্তভাবে উন্নীত হবে ২০২৭ সালে। তখন জিএসপি সুবিধা থাকবে না। এফটিএ করে পারস্পরিক বাণিজ্য সুবিধা নিতে হবে। চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্প বাস্তিবায়িত হচ্ছে।
 
তোফায়েল আহমেদ বলেন, চীনের সাংহাইয়ে আগামী ৫-১০ নভেম্বর প্রথমবারের মতো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোর্টার্স এক্সপো-২০১৮ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ এতে অংশগ্রহণ করবে।
 
তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে উভয় দেশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। চীনের বাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধি করা হলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। চীন বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্র এবং ব্যবসায়িক ও উন্নয়নের অংশীদার। চীনের সহযোগিতায় পূর্বাচলে ৩৫ একর জমির উপর চীন-বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মিত হচ্ছে। আগামী ২০২০ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এর মোট ব্যয়ের সিংহ ভাগ চীন সরকার বহন করবে।
 
চীনের রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেন, চীন বাংলাদেশকে উচ্চমাত্রায় গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক চমৎকার। বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষর করে বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা শুরু করতে চায় চীন। বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। প্রাইভেট এবং জি টু জি ভিত্তিতে এসব কাজ চলছে। চীনা প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের সময় ২৭টি প্রকল্পে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। এর কয়েকটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিছু অনুমোদনের পথে। কিছু পাইপলাইনে আছে। কর্ণফুলি টানেল, পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ, আইসিটি, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি।
 
এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসু এবং এফটিএ শাখার অতিরিক্ত সচিব মো. শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৮
আরএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।