ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ 

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮
পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ  এখনও জমে ওঠেনি তারাকান্দা বাজার পশুর হাট -অনিক খান 

তারাকান্দা (ময়মনসিংহ) ঘুরে এসে: হাটে পশুর কোনো অভাব নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দরদামে বনিবনা না হওয়া। বিক্রেতারা বেশি দাম হাঁকছেন। কিন্তু ক্রেতারা সেই দাম শুনে যেন আঁতকে উঠছেন। ফলে ক্রেতার ভিড় থাকলেও সেই তুলনায় বিক্রি হচ্ছে না পশু।

বেচাকেনা কম থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কপালেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ। দৃশ্যটি ময়মনসিংহের তারাকান্দা বাজার পশুর হাটের।

 

শনিবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার এই পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আর মাত্র দুইদিন বাকি থাকলেও এদিনও পুরোমাত্রায় বেচাকেনা শুরু হয়নি। তবে রোববার (২০ আগস্ট) দুপুরের পর থেকে বিক্রি জমে উঠবে এমন প্রত্যাশা বিক্রেতা ও ইজারাদারের।  

হাটের এক কোণে মাঝারি আকারের দু’টি দেশি গরু নিয়ে বসে আছেন গৃহস্থ মজিবুর রহমান (৫০)। গরু দু’টির দাম হেঁকেছেন ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু সাকুল্যে দাম উঠেছে মাত্র ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা।  

আক্ষেপ করে মজিবুর জানান, গরু লালন-পালন করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে সেই দাম বলছে না কেউ। চাঁদ রাতেও কাঙ্খিত দাম না পেলে গরু বিক্রি করবেন না! 

স্থানীয় বুলিরকান্দা গ্রাম থেকে হাটে এসেছেন মন্তা আলী (৪৫)। বড় আকারের ষাঁড়-গরু নিয়ে তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন ক্রেতার। তিনি ষাঁড়টির দাম চেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু দাম শুনেই ক্রেতাদের চোখ যেন কপালে উঠেছে।  

একই অবস্থা স্থানীয় জিগারতলা থেকে আসা আলী মিয়ার। তিনিও তার আকর্ষণীয় কালো রঙের ষাঁড়ের দাম চেয়েছেন সব থেকে বেশি, ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু কোনো ক্রেতাই তার কাছাকাছি দাম বলছেন না। ফলে বেজার মুখ নিয়েই বসে আছেন আলী মিয়া।

অবশ্য এই হাটেই গরু দেখতে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার হাটে বিক্রেতারা আকাশছোঁয়া দাম হাঁকছেন। গতবারের চেয়ে আকারভেদে প্রতি গরুর দাম ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে, যা ক্রেতাদের সাধ্যের বাইরে।  

এই হাটেই আলাপ হলো ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম মোড় এলাকা থেকে আসা সোহেল মিয়ার সঙ্গে। মধ্যবয়সী সোহেল মিয়া জানান, বিক্রেতারা বিক্রির মতো দাম চাচ্ছেন না। ফলে দরদাম করেই ফিরে যেতে হচ্ছে।  

হাটে আসা ক্রেতারা জানান, প্রতিবারই ময়মনসিংহ শহরের সার্কিট হাউজ মাঠের পশুর হাট বসে ঈদের মাত্র দিন দুয়েক আগে। ফলে আগেভাগেই যারা গরু কিনতে চান তারা ভিড় করেন তারাকান্দা, ঈশ্বরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার পশুর হাটে। গতবার অপেক্ষাকৃত সস্তায় গরু মিললেও এবার দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন ব্যাপারি ও গৃহস্থরা।  

দেখা গেছে, এই হাটে দেশি গরুর আধিক্য রয়েছে। বিদেশি কোনো গরু নেই। তবে গরু বা ছাগল কোনো পশুর দামই সহনীয় পর্যায়ে নেই। তবে হাটে ভারতীয় গরু না থাকায় রীতিমতো স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা।  

গরু বিক্রেতা মন্তা আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘অনেক কষ্টে গরু পালি (লালন-পালন)। আশায় থাহি (থাকি) কবে আইবো কোরবানির ঈদ। এইবার বাইরেত্তনে (বাইরে থেকে) কোনো গরু আহে (আসে) নাই। এইতেই (এতেই) আমরা খুশি। আমগর (আমাদের) ক্ষতিত (ক্ষতিতে) পড়তে অইবো (হবে) না। ভালা (ভালো) দাম পাইমু (পাবো)। ’ 

তারাকান্দা বাজারের ইজারাদার মাহবুবুল হক বাবলু বাংলানিউজকে বলেন, হাটে পর্যাপ্ত পশুর সরবরাহ রয়েছে। তবে দরদামে না মেলায় বিক্রি হচ্ছে কম। এই অবস্থা থাকবে না। রোববার (১৯ আগস্ট) হাট পুরোপুরি জমে উঠবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৮ 
এমএএএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।