ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কক্সবাজারের স্থানীয়দের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৮
কক্সবাজারের স্থানীয়দের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তা

ঢাকা: বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কারণে প্রভাব পড়েছে স্থানীয় মানুষজনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা এদেশে এসে অনেক স্থানীয়র কৃষি জমিতেই বাড়ি তুলেছেন, এ কারণে ক্ষতির শিকার হয়েছেন তারা। এ সমস্যা থেকে স্থানীয়দের টেনে তুলতে ৫১৫ মিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ২২৩ কোটি (এক ডলার সমান ৮২ টাকা ধরে) টাকা অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। 

শনিবার (০৬ অক্টোবর) বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এলাকাতেই মূলত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল।

সরকারি হিসাবে এ এলাকায় ৩০টি রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্প রয়েছে। কিন্তু উখিয়া ও টেকনাফের মূল সড়কগুলো ধরে গাড়ি চালিয়ে গেলে দেখা যাবে বন বিভাগের জমি, সরকারি খাস জমি ও সাধারণ মানুষজনের জায়গায় এবং পাহাড়ের গা ঘেঁষে রোহিঙ্গাদের আরও অসংখ্য ঘর-বাড়ি।

আগে যারা এসেছেন তাদের অনেকেই কক্সবাজারে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলেমিশে গেছেন। এ অভিজ্ঞতা এখানে বহু মানুষের। বেশ ক’টি মৌসুম পার হয়ে গেছে। বহু কৃষকের চাষবাদ বন্ধ।

এ পর্যন্ত উখিয়া-টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা প্রায় ৫ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমিতে ১ লাখ ৬৫ হাজার ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছে। এ বিপুল বনভূমি উজাড় হওয়ায় ৩৯৭ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৩ টাকার সমপরিমাণ জীববৈচিত্র্য ও বনসম্পদের ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য আরও সাড়ে ৩ হাজার একর বনভূমির প্রয়োজন। বনভূমি দখল অব্যাহত থাকার কারণে ভয়ানক পরিবেশগত ঝুঁকির মুখে পড়েছে বনাঞ্চল। কক্সবাজার এলাকার বনভূমি উন্নয়নে এ সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

এ সহায়তা উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য, বন ব্যবস্থাপনা ও গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নেও ব্যবহার করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশে তিনটি প্রকল্পের আওতায় এই সহায়তা অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাক। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটনে শুক্রবার (৫ অক্টোবর) এটা অনুমোদন করা হয়।  

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখপাত্র মেহরিন এ মাহবুব বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য স্থানীয়দের নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে আমরা জানি। স্থানীয় মানুষের সমস্যা থেকে উত্তোরণেই মূলত এ সহায়তা অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ অর্থায়ন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের হোস্টিংয়ের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলায় স্থানীয় জনগণের দারিদ্র্যতা হ্রাস ও নতুন জীবনযাত্রার সুযোগ সৃষ্টি করে গ্রামীণ জনগণকে সহায়তা করবে। মোটি তিনটি প্রকল্পের আওতায় এ সহায়তা দেয়া হয়েছে। সবগুলোই কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য।

‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্পের আওতায় ২৪ কোটি ডলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের সামাল দিতে কোস্ট গার্ড নদীতে মাছ ধরতে দেয়না। তাই জেলেদের জীবন চলে এখন দিন মজুরী করে। কোন দিন কাজ পায় কোনদিন পায়না। উপকূলীয় জেলেদের উন্নয়নে এ ২৪ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি স্থানীয়দের মাছ ধরার আইডি কার্ড সিস্টেম প্রসারিত করতে সহায়তা করবে, যা ভৌগলিক তথ্য সিস্টেম প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত হবে। এটি মাছ ধরার জন্য নিবন্ধন এবং লাইসেন্সিং উন্নত করবে।

‘রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইম্প্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় ১০ কোটি ডলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাতে ২৬ জেলার গ্রামীণ সড়কের বেহালদশা। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য কক্সবাজারের অবস্থা আরো বেহাল। এসব সড়ক উন্নয়নে এ সহায়তা ব্যয় করা হবে।

১৭ দশমিক ৫ কোটি ডলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে ‘ সাসটেনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভহুড’ প্রকল্পে। রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক বনভূমি উজাড় হয়ে গেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ৭৯ হাজার জমিতে বৃক্ষরোপণ করা হবে। মূলত জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব থেকে মুক্তি দিতেই এ প্রকল্প।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৮
এমআইএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।