ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এইমসের লেনদেন স্থগিত রেখে হাজারো বিনিয়োগকারীকে পথে বসাচ্ছে এসইসি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪২ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১০

ঢাকা: সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) নিজের আইন নিজেই লঙ্ঘন করে চলেছে। অন্যায়ভাবে এইমস মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে স্থগিত করে রেখেছে তারা।

এতো দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন স্থগিত থাকায় হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর প্রায় পৌণে চারশ’ কোটি টাকা আটকে গেছে। এসইসির  নির্দেশে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ এইমসের লেনদেন স্থগিত করে রাখায় এসব হাজার বিনিয়োগকারীর এখন  পথে বসার উপক্রম। কবে ‘এইমস’-এর লেনদেন পুনরায় চালু হবে এসইসি কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্টভাবে কিছুই না বলছে না। ফলে অনিশ্চয়তা আর   উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটছে বিনিয়োগকারীদের।

হাজার হাজার ুদ্র বিনিয়োগকারীর পুঁজির একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে এখানে আটকে থাকায় তারা বড় রকমের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছেন। কবে নাগাদ প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন চালু হবে এ বিষযে জানতে চাইলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে গত ২৯ মার্চ থেকে ২ জুন বুধবার পর্যন্ত  টানা ৪৬ কার্যদিবস বা ৬৫দিন এইমস মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন স্থগিত রেখেছে।   অথচ আইন অনুযায়ী কোনো অবস্থাতেই দ্বিতীয়বার ১৪ দিনের বেশি লেনদেন স্থগিত রাখার কোনো সুযোগ নেই।

 এসইসি’র অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ দ্বিতীয় অধ্যায়ের রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব স্টক এক্সচেঞ্জ’র অনুচ্ছেদ নয়-এর লিস্টিং অব সিকিউরিটিজ  ধারার সাত নম্বর উপধারায় এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিনিযোগকারীদের স্বার্থে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে, এসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ তালিকাভুক্ত যে কোনো কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন প্রথমে সর্বোচ্চ ১৪ দিন পর্যন্ত স্থগিত রাখতে পারে। তারা চাইলে এর মেয়াদ আরো ১৪ দিন বাড়াতে পারবে। তবে দ্বিতীয়বার এ মেয়াদ কোনোভাবেই ১৪ দিনের বেশি বাড়ানো যাবে না। অথচ এসইসি এ আইন অমান্য করে গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে এইমস মিউচুয়াল ফান্ডের  লেনদেন স্থগিত করে রেখেছে।
 
এ ব্যাপারে এসইসি’র জ্যেষ্ঠ সদস্য মো. মনসুর আলম বাংলানিউটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, “আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। ” কবে নাগাদএইমসের লেনদেন চালু হবে এবিষয়ে তিনি বলেন, “যারা লেনদেন স্থগিত করেছেন তাদের কাছে গিয়ে  জিজ্ঞেস করুন। ”

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এইমস মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন এসইসি’র নির্দেশে স্থগিত করেছে বলে উভয়ের ওয়েব সাইটে উল্লেখ করা আছে।

এসইসি’র আরেক সদস্য ইয়াসিন আলী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, “এসইসি’র মৌখিক নির্দেশেই দুই স্টক এক্সচেঞ্জ এইমসের লেনদেন স্থগিত করেছে। পরে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ”

আইন লঙ্ঘন হওয়ার বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেন।  

ডিএসইসি’র সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালাউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, “এসইসির নিজের আইন নিজে লঙ্ঘন করা উচিত হয়নি। তারা এইমস মিউচুয়াল ফান্ডের বিষয়ে একটি সমাধানে আসা উচিত। এসইসি হয় হাইকোর্টের রায় মেনে নেবে অথবা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। এই দুইটির যে কোনো একটি বেছে নেওয়া উচিত। ”

ডিএসই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সতিপতি মৈত্র এইমসের লেনদেন স্থগিত করার বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

তবে সিএসই’র সভাপতি ফকির উদ্দিন আলী আহম্মদ বলেন, “আমরা এসইসি’র নির্দেশেই এইমসের লেনদেন স্থগিত করেছি। ”
 
এইমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাঈদ বলেন, “আমরাও চাই এইমসের লেনদেন চালু করা হোক। এসইসি লেনদেন বন্ধ করায় আমাদের কিছুই করার নেই। ”

ুদ্র বিনিয়োগকারী মো. রিজভী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, এইমস মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকৃত প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আটকে থাকায় মার্কেটে লেনদেন করতে পারছি না। লেনদেন স্থগিত থাকায় এখন আমার পুরো টাকাই আটকে আছে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এইসস মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি বোর্ড দুই বছরের স্টক ডিভিডেন্ড ও রাইট ঘোষণা করে। এ ঘোষণার পরদিন এসইসি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার এইমস মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন স্থগিত করে দেয়। একইসঙ্গে এসইসি ওইদিন রাইট ও বোনাস শেয়ার যুক্তিকথার বিষয়ে জানতে এইমস মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি বোর্ড চিঠি দেয়। গত এক মার্চ এইমস মিউচুয়াল ফান্ড কর্তৃপক্ষ এসইসি’র চিঠির জবাব দেয়। চিঠির জবাব পাওয়ার পর সাত মার্চ রোববার এসইসি’র কমিশন সভায় এইমস ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি বোর্ডের রাইট ও স্টক ডিভিডেন্ড দেয়ার ঘোষণা যৌক্তিক না হওয়ায় এসইসি তা অনুমোদন না করে বাতিল করে দেয়। গত আট মার্চ থেকে আবারও এইমসের লেনদেন চালুর নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে ২৮ মার্চ এক বিনিযোগকারীর আবেদনের পরিপেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রাইট বোনাস বাতিল করার সিদ্ধান্তটি তিন মাসের মধ্যে স্থগিত করে দেন। একইসঙ্গে আদালত এসইসি কর্তৃক রাইট বোনাস বাতিল করা কেন অবৈধ হবে না, তা কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেন। আদালতের এ ঘোষণার পরদিন ২৯ মার্চ সোমবার এসইসি আবারো এইমসের লেনদেন স্থগিত করে দেয়। স্থগিতাদেশ এখনো অব্যাহত রয়েছে।


বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১০
জিএস/বিকে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।