ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খুলনায় জনপ্রিয় হচ্ছে ধান কাটার মেশিন

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮
খুলনায় জনপ্রিয় হচ্ছে ধান কাটার মেশিন ধান কাটার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে ব্যস্ত কৃষক। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনায় দিন দিন কদর বাড়ছে ধান কাটা মেশিনের। কৃষি শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা কঠিন হয়ে পড়ায় মেশিনের চাহিদা এখন তুঙ্গে।

জমির মালিকরা জানান, কৃষি শ্রমিকের দিন দিন এতো অভাব দেখা দিচ্ছে যে ধান পাকলে বিপদে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া যেসব শ্রমিক পাওয়া যায় তাদের পারিশ্রমিক বেশি।

এসব কারণে অনেকের পাকা ধান নষ্ট হয়ে যেতো। এখন ধান কাটার মেশিন পাওয়াতে ধান কাটতে সময়ও কম লাগছে আবার খরচও বাঁচছে।

তারা আরও জানান, অনেকে নিজে কিনেছেন মেশিনটি। যারা পেডিকাটার কিনতে পারেননি তারা ভাড়ায় এনে ধান কাটছেন। তবে খুলনার নয় উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধান কাটার মেশিন ব্যবহার হচ্ছে দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা ও কয়রায়।

জেলার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাত দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন মেশিনের দিন শুরু হয়ে গেছে। স্বল্প সময়ে এবং কম খরচের ধান কাটার যন্ত্র হাসি ফুটিয়েছে কৃষকদের মুখে। এ যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষকরা রক্ষা পাচ্ছেন বিপুল উৎপাদন খরচের হাত থেকে। আর মেশিন কিনতে তাদের সহযোগিতা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

তারা আরও জানান, এ মেশিনে শুধু ধান কাটা নয় মাড়াইও করা যায়। আগে ধান কেটে মাঠ থেকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর বড় পিড়িতে পিটিয়ে ধান বের করতে হতো। অথবা গরু দিয়ে মাড়াই করা হতো। এতে অনেক সময় লেগে যেতো। মেশিন দিয়ে ধান কাটার অপেক্ষায় কয়েকজন।  ছবি: বাংলানিউজএছাড়া শ্রমিকও লাগতো বেশি। এরপর এলো পা দিয়ে ব্যবহৃত মেশিনে ধান মাড়াই। তারপর শ্যালো মেশিনে ধান মাড়াই। এসবের দিন এখন শেষ হয়ে গেছে। এখন এসেছে যন্ত্র চালিত মেশিন।

শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে দাকোপ উপজেলার বাজুয়া গ্রামের জমির মালিক শীলা দিত্য গাইন বাংলানিউজকে বলেন, মেশিনটি নতুন হওয়ায় অনেকে এর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। গত বছরের চেয়ে এবছর ধান কাটা মেশিনের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। উপজেলার কচা, বাজুয়া, কাকড়াবুনিয়া, ধুতিহারা, বেড়ের খাল, চাঁদ পাড়া গ্রামে অনেক ধানী জমির মালিক ধান কাটার মেশিন কিনেছেন। আবার কেউ কেউ ভাড়ায় এনেও ব্যবহার করছেন।

তিনি জানান, এ উপজেলায় ধান কাটার মেশিন বেশি জনপ্রিয় হওয়ার কারণে এখানে ধান উঠলেই জমিতে তরমুজের চাষ করা হয়। তাই যতো তাড়াতাড়ি পাকা ধান ঘরে তোলা যায় ততোই আগে তরমুজের চাষ শুরু করা যাবে।

বটিয়াঘাটা উপজেলার ফুলতলা গ্রামের ধান ক্ষেতের মালিক উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ধান কাটার মেশিন। এক বিঘা জমির ধান কাটতে ৫ থেকে ৬ জন শ্রমিকের সময় লাগে এক দিন। সেখানে মেশিনে এক বিঘা জমির ধান কাটতে সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। এ সময় মেশিনে অকটেন/ পেট্রোল লাগে এক লিটার, যার মূল্য ৯০ টাকা।

তিনি বলেন, আর যদি জমির মালিক মেশিন দিয়ে ধান কাটে তাতে খরচ দিতে হয় বিঘা প্রতি ৮০০ শত টাকা। আর সেখানে শ্রমিক দিয়ে কাটালে দ্বিগুণের বেশি খরচ হতো।

তিনি আরও বলেন, মেশিন দিয়ে ধান কাটার দৃশ্য দেখতে প্রতি দিনই ধান ক্ষেতে জড়ো হন গ্রামের অনেক মানুষ।
একই গ্রামের কৃষক কুমারেশ রায় বলেন, এক বিঘা জমির ধান কাটতে এ মেশিনের সর্বোচ্চ ৪০ মিনিট সময় লাগে। আর জ্বালানি খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ অনেক কম। এতে আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেঁচে যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে জানান, খুলনাঞ্চলে দিন দিন কদর বাড়ছে ধান কাটার মেশিনের। স্বল্প সময়ে কম পরিশ্রমে বেশি সুফল পাওয়ায় জমির মালিক ও কৃষকরা যন্ত্রটি ব্যবহার করছেন। ধান পুরোপুরি পাকার আগ মুহূর্তে এক সঙ্গে কাটা মাড়াই শুরু হওয়ায় শ্রমিক সংকটে পড়তে হতো কৃষকদের। এখন মেশিনে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ হওয়ায় শ্রমিক সংকটে বিপদে পড়তে হচ্ছে না।

তিনি জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রাসহ বিভিন্ন উপজেলায় অনেক কৃষককে ভর্তুকি দিয়ে এ মেশিন দেওয়া হয়েছে। এতে সুফল পাওয়ায় অনেক জমির মালিক নিজেরাই মেশিনটি কিনে নিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮
এমআরএম/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।