বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ গত বছরের মে মাসে বাড়তে শুরু করলেও জুন মাস থেকে আবার কমতে শুরু করে। কমতে কমতে গত বছরের নভেম্বর মাসে এসে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক শুন্য ১ শতাংশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের মে মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশ, জুনে তা কমে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে, কমার ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ে হয়েছিল ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ, আগস্টে ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং নভেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক শুন্য ১ শতাংশে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ২০১৮ সালের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করে দিলেও ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।
তাই চলতি মাসেই বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশই রাখা হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতে আগ্রহ দেখায়নি। এ কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। তাছাড়া বছরের শেষ দিকে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের পরিবর্তে আদায় করতে বেশি জোর দেওয়ার কারণেও ঋণ বিতরণ কম হয়েছে।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংক প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, সংসদ নির্বাচনের পরে নতুন বছরে ঋণের চাহিদা বাড়বে।
তবে এবিবি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণ তারল্য সংকট।
‘দেশে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সঙ্কট নিরসনে গত বছরের ১ এপ্রিল সরকার নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) এর হার ১ শতাংশ কমিয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তার ফলে তারল্য সংকট কাটিয়ে ব্যাংক খাতে টাকার প্রবাহ বাড়লেও ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়নি। ’
ওই কর্মকর্তার মতে, এপ্রিলে নগদ টাকার সংকট কাটিয়ে কয়েক মাস ধরে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় টাকার প্রবাহ বাড়ানো হলেও তার প্রভাব দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ ওইসময় তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো আমানতের জন্য ১০ শতাংশেরও বেশি সুদ দেওয়ার প্রস্তাব দেয় গ্রাহককে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের পরে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে। একইসঙ্গে ঋণ প্রবাহ বাড়ার সীমা অপরিবর্তিত রেখে আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করা হলে তা তদন্ত করবে বলেও জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এদিকে, সরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ধারায় হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের কারণে সরকারি খাতের নেতিবাচক ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, নতুন বছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে খুব শিগগিরই। নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা ও লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৯
এসই/আরবি/