দু’দেশের সীমান্তবাসীদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানো ও বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশের মধুগ্রাম ও ভারতের শ্রীনগর সীমান্তে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চালু হয় দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাট। হাটের শুরুতে দু’দেশের আশপাশের পাঁচ কিলোমিটারে বসবাসরত গ্রামবাসীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বেচাকেনা মূল লক্ষ্য থাকলেও চার বছরের মাথায় এসে মানা হচ্ছে না সেই নীতিমালা।
প্রতি মঙ্গলবার বসা এ হাটে দুর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা গাড়ি হাঁকিয়ে হুমড়ি খেয়ে হাটে ঢুকে অবাধে ভারতীয় মাল কিনছেন। অপরদিকে ভারতীয় অংশে কড়াকড়ি থাকায় অনেকটা ক্রেতা শূন্য হাটের বাংলাদেশি পণ্যের অংশ।
দু’দেশের বৈধ পণ্যের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং উভয় দেশের জনগণের মধ্যে ভাববিনিময় ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচনা ছিল এ হাটের উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো। ছাগলনাইয়া সীমান্ত হাটে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, ভারতীয় পণ্য সেখানে বেশি। নির্দিষ্ট পণ্য তালিকার বাইরের অনেক পণ্যসামগ্রীও বেচা-কেনা হচ্ছে।
ফেনী, ছাগলনাইয়া ও বারইয়ারহাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ বাজার থেকে পণ্য আমদানি করে। দাম কম হওয়ায় বাংলাদেশিরা অনেকটা হুমড়ি খেয়ে ভারতীয় পণ্য কিনছেন দেদারছে।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারে ভারত-বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা আলাদা শেডে ৩০টি করে মোট ৬০টি দোকান রয়েছে। ভারতীয় প্রতিটি দোকানে গড়ে সপ্তাহে প্রতি হাটবারের দিন প্রায় ২ লাখ টাকার মতো বেচা-বিক্রি হয়, আর বাংলাদেশিদের দোকানে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকার মতো বেচা-কেনা হয়।
বাংলাদেশি শেডের ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারের শতকরা ৯০ শতাংশ ক্রেতাই বাংলাদেশি। আর ১০ শতাংশ ভারতীয়।
এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা অভিযোগ করে জানান, এ সীমান্ত হাট দিয়ে বৈধ পথে অবৈধ মালামালের কারবার হয়। সীমান্ত হাটে যাওয়ার জন্য টিকিট (প্রবেশ কার্ড) সংগ্রহে কিছুটা সরকারি বাধ্যবাধকতা থাকায় এখানকার এক শ্রেণীর কালোবাজারি ও দালাল ২০ টাকার প্রবেশ কার্ড ক্ষেত্র বিশেষে বাংলাদেশি লোকদের থেকে ১শ থেকে ২শ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। অনেকেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেশি সংখ্যক প্রবেশ কার্ড সংগ্রহ করে বাড়তি আয় শুরু করেছে।
ক্রেতারা জানান, হাটে ভারতীয় অংশে বিক্রি হচ্ছে না কোনো ধরনের খুচরা পণ্য। হরলিক্স, গুঁড়োদুধ, প্যাম্পার্সসহ ভারতীয় সব প্রসাধনী কার্টনে বিক্রি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা পণ্য কিনতে ব্যর্থ হচ্ছে।
কবির আহম্মদ নামে বাংলাদেশি এক বিক্রেতা জানান, বাংলাদেশি বাজারে মাছ, শুঁটকি, মুদি মাল, বেকারি ও প্লাস্টিক পণ্য বিক্রি হলেও ভারত থেকে আসছেন না তেমন কোনো ক্রেতা। হাটে প্রবেশে সেদেশের কড়াকড়ি থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছে বাংলাদেশি বিক্রেতারা।
হাটের অনিয়ম ও চোরাচালানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য না দিলেও জেলা প্রশাসক জানান, তারা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছেন। জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯
এসএইচডি/এএ