কষ্টে উপার্জিত গ্রাহকদের এ টাকা ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত তিন মাস পেরিয়ে গেলেও দাবি পূরণে কোম্পানিগুলো গড়িমসি করছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, উল্লেখিত সময়ে পাঁচ ধরনের বিমা দাবির মধ্যে প্রথমত. কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের ১০ হাজার ৭৬২টি মৃত্যু বিমা দাবি পরিশোধে গড়িমসি করছে। যা টাকার অংকে দাঁড়িয়েছে ৯৪ দশমিক ২৭ কোটি টাকা।
দ্বিতীয়ত. মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোম্পানির শাখা অফিস থেকে প্রধান অফিসে দৌড়ঝাঁপ করে জুতাক্ষয় করেছেন অনেকে। কিন্তু ১ লাখ ৬০ হাজার ৭২৪টি বিমা দাবি পরিশোধ করেনি কোম্পানিগুলো। একই সময়ে গ্রাহকরা সারেন্ডার করার পর ৬৭৫টি বিমা দাবি পাননি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে।
এছাড়াও সার্ভাইবেল বেনিফিটি (এসবি) নামের ৮৮ হাজার ৩১টি বিমার দাবি এবং ৬ হাজার ১৯৪টি গোষ্ঠী ও স্বাস্থ্য বিমা দাবি পরিশোধ করেনি কোম্পানিগুলো। অপরদিকে আগের বছরের প্রান্তিকের জেরে থাকাসহ মোট পৌনে ৩ লাখ বিমা দাবি পরিশোধ করেনি কোম্পানিগুলো।
প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, তিন প্রান্তিকে দাবি পরিশোধ না করার শীর্ষে রয়েছে প্রগ্রোসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের ৬১ হাজার ৩১১টি বিমা দাবি পরিশোধে গড়িমসি করছে। যা টাকার অংকে ৪০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সরকারি বিমা কোম্পানি জীবন বিমা করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের ২০১৮ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ৫২ হাজার ৭০টি বিমা দাবি পরিশোধ করেনি। যা টাকার অংকে ১৮৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এই কোম্পানি একই সময়ে গ্রাহকদের মোট ৪২ হাজার ৫০৭টি বিমা দাবি পরিশোধ করেনি। যা টাকার অংকে ৬৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ২৩ লাখ ৮৩০টি দাবি পরিশোধ না করায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। টাকার অংকে যা ৯৭ কোটি ৪২ লাখ।
আর পঞ্চম স্থানে রয়েছে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। কোম্পানিটি গ্রাহকদের মোট ১২ হাজার ৯৮৯টি বিমা দাবি পরিশোধ করেনি। যা টাকার অংকে ১৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
অপর দিকে একই সময়ে ৯৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ বিমা দাবি পরিশোধ করেছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। একইভাবে ডেল্টা লাইফ ও প্রাইম ইসলামী লাইফ ৯৯ শতাংশ বিমা দাবি পরিশোধ করে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
আইডিআরএ সূত্র মতে, তিন প্রান্তিকে কোম্পানিগুলোর কাছে ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৪১১টি বিমার দাবি পরিশোধের অভিযোগ আসে। যা টাকার অংকে ৫ হাজার ১৭১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৪১ লাখ টাকার বিমা দাবি পরিশোধ করে। যা দাবি পরিশোধের দিক থেকে ৮৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
সার্বিক বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইডিআরএ’র সদস্য মো. বোরহান উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বিমা খাতে সাধারণ মানুষের আস্থা কম। এ খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়াতে বিমা দাবি পরিশোধের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিমা দাবি দিচ্ছে না গ্রাহকদের এ ধরনের অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে জানান তিনি।
বিমা দাবি পরিশোধে বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে রোবহার উদ্দিন বলেন, এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিমা দাবি নিষ্পত্তি কমিটি’। আইডিআরএ’র বর্তমান কমিটি ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে দায়িত্ব নেয়। ফলে বিমা কোম্পানিগুলো দাবি পরিশোধে আগ্রহী হচ্ছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও বিমা খাতের ইমেজ সংকট থেকে উত্তরণে বছরব্যাপী সচেতনতামূলক কার্যক্রম, প্রচার-প্রচারণা, বিমা মেলা এবং বিমা দাবি পরিশোধের বিষয়ে একের পর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যারা বিমা দাবি পরিশোধে গড়িমসি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের এ সদস্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৯
এমএফআই/জেডএস